ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পেয়েছে আম্ফান। আজ সোমবার (১৮ মে) থেকে আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এটি।
এখন পর্যন্ত আম্ফানের যে গতিপথ, তাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা হয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা খুলনার সুন্দরবন এলাকায় আঘাত হানতে পারে ১৯ মে রাতে কিংবা ২০ মে।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে তাদেরকে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ছয় মাস আগে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সঙ্গে আম্ফানের পার্থক্য বলতে শুধু সময়টা। বুলবুল আঘাত হেনেছিল নভেম্বরে; আর আম্ফান আঘাত হানতে যাচ্ছে মে মাসে। আম্ফানের বাকি সব বৈশিষ্ট্য বুলবুলের মতোই। ১১ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর তাণ্ডবে উপকূলের ১৫ জেলায় প্রাণ গিয়েছিল ২২ জনের। যদিও প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবন বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিল বাংলাদেশকে তবে অনেক এলাকায় বুলবুল তছনছ করে দিয়ে গেছে গাছপালা, ঘরবাড়ি ও ফসল।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এখন পর্যন্ত যতটুকু শক্তি সঞ্চয় করেছে, তাতে উপকূল পর্যন্ত আসতে আসতে যদি শক্তি ক্ষয় না হয়, তাহলে বুলবুলের মতোই ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। আম্ফানের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি ঝরবে।
আবহাওয়া অফিসের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আম্ফান প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। যেটি মঙ্গলবার নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পাবে। ঘূর্ণিঝড়ের চারপাশে বাতাসের গতিবেগ ১৩০ কিলোমিটার থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে।’
সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি এখনো আমাদের সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে আছে। শক্তি সঞ্চয় করে এটি উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে।’
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোনসংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের নির্ধারিত তালিকা থেকে এর নাম দেওয়া হয় ‘আম্ফান’। এটি থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম।
করোনাভাইরাস নিয়ে এমনিতেই আতঙ্কে দিন কাটছে দেশবাসীর। সদা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় মোড়ানো এই পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে সাগরে এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সৃষ্টিতে।