লকডাউন না মানাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে ৫ মামলায় পুলিশি অভিযানের কারণে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (০৯ এপ্রিল) ওই সব এলাকার বাড়ি-ঘরগুলোতে নারী আর শিশু ছাড়া কোনো সদস্য দেখা যায়নি। এ সময় বাড়ির নারী ও শিশুদের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ দেখা গেছে। এলাকার পরিস্থিতি এখনও থমথমে। বাইরের মানুষ দেখলেই তারা ভয়ে দৌড়ে সরে যাচ্ছেন।
ফুকরা বাজার এলাকার করিমন বেগম জানান, সব সময় ভয়ে থাকি। আমাদের এখন পুলিশ দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে যাচ্ছে। বাড়িতে কোন পুরুষ সদস্য নেই। সবাই পালিয়ে পালিয়ে রয়েছে।
নুরজাহান নামে একজন জানান, ওইদিন অন্য এলাকা থেকে লোকজন এসে হামলা করছে। আমাদের গ্রামের কোনো লোক ওই তিনের হামলায় ছিল না। এখন তো কোনও পুরুষই এলাকায় নেই ভয়ে।
মনির নামে একজন জানান, বালিয়া গট্রি এলাকা ও উপজেলা কেন্দ্রীক এলাকার বাড়িগুলোতে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। ঘটনার পর থেকে ওই সব এলাকার লোকজন পলাতক অবস্থায় রয়েছে। কখন কি হয় কেও বলতে পারে না। তাই সবাই ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, সালথায় উপজেলা পরিষদ, এসিল্যান্ড অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ দিনরাত জোরদার অভিযান চালানো হচ্ছে। বেশির ভাগ এলাকায় পুলিশি অভিযানের কারনে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে এলাকাগুলো। তারপরও পুলিশ তাদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় যে জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা পুলিশ নেবে।
গত ৫ এপ্রিল সালথার ঘটনায় এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে পাঁচটি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ হাজার জনকে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৪৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নতুন যে চারটি মামলা হয়েছে তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলা করেছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) মোহাম্মাদ হাসিব সরকারের গাড়িচালক মো. হাশমত আলী। এই মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩ থেকে ৪ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
অপর মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস। এ মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক মো. সাগর সিকদার। এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে তিন থেকে চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার সালথা থানার এস আই (উপ পরিদর্শক) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং প্রায় চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রথম মামলাটি করেন।
উল্লেখ্য, লকডাউন না মানাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার বিকেলে সালথার ফুকরা বাজারে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এসিল্যান্ডের গাড়িতে থাকা সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের। এরপরই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ সালথা উপজেলা পরিষদ, এসিল্যান্ড অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।