গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বোরো ধানে তিন রিপুতে কৃষকরে সর্বনাশ হচ্ছে। এ বছর এ রোগটির প্রকোপ বেশি দেখা দেওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। কিন্তু উপজেলা কৃষি বিভাগ এ সমস্যা ব্যাপক আকার নেয়নি বলে দাবি করছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে এরই মধ্যে অন্তত আড়াই শ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একেবারে শেষ মুহূর্তে বোরো ধানে ব্লাস্ট, ব্যাকটিরিয়াল পেলিক্যাল ব্লাইট ও হট ইঞ্জুরিতে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান। এতে কৃষকদের মধ্যে ফসর হারানোর আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
অনেক কৃষক ফসল হানির আশঙ্কা করছেন।উপজেলা কৃষি অফিস ও বোরো চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, ব্লাস্ট মূলত ধানের পাতায় প্রথমে ছোট ছোট কালচে বাদামী দাগ দেখা যায়। ধীর ধীরে দাগগুলো বড় হয়ে মাঝখানটায় ধূসর বা সাদা ও কিনারায় বাদামী রঙ ধারণ করে। একাধিক দাগ মিশে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পুরো পাতাটি শুকিয়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে গিট আক্রান্ত হয়ে আক্রান্ত স্থান কলো ও দুর্বল হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেতে নেকব্লাস্ট দেখা যাচ্ছে। নেকব্লাস্ট মূলত ধান গাছের এক ধরণের ‘শীষ মরা’ জাতীয় রোগ। খেতের ওপর থেকে দেখে এ রোগের ভয়াবহতা আঁচ করা যায় না। ওপরে খেত স্বাভাবিক দেখা গেলেও এ রোগে আক্রান্ত ধানগাছের শীষ মরে যায়। ফলে গাছের ধান নষ্ট হয়। কোন ধরণের ছত্রাকনাশকেই এ রোগ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।
এদিকে গলাচিপা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর রোদের তাপ অত্যন্ত বেশি। উপজেলায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। তারওপরে দিনে গরম এবং রাতে ঠাণ্ডা এবং রাতে ভ্যাপসা গরম পরছে। এ কারণে এই রোগগুলো ছড়িয়ে পরছে। এতে বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ আরো জানিয়েছে, উপজেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বোরো ধানের আবাদ যথেষ্ট বেড়েছে। এ বছর দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আড়াই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে, তার কোনো সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, এ রোগটি লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই ছত্রাক নাশক স্প্রে ব্যবহার করতে হয়। ছত্রাক নাশকের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক আগাম সমস্ত ধানের জমিতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারছে না। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠ পর্যায়ে বোরো চাষিদের মধ্যে ফলন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চরবিশ্বাস, চরকাজল, গোলখালী, আমখোলা, গলাচিপা সদর, পানপট্টি, ডাকুয়া, গজালিয়া, চিকনিকান্দিসহ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে বোরো ধানের ক্ষেতে ব্লাস্ট, ব্যাকটিরিয়াল পেলিক্যাল ব্লাইট ও হট ইঞ্জুরিতে ছড়িয়ে পরতে দেখা গেছে। এ রোগে আক্রান্ত ক্ষেতে ধানের পাতা সবুজ দেখতে হলেও শীষ শুকিয়ে মরে গিয়ে চিটায় রূপ নিতে দেখা গেছে। গলাচিপা উপজেলার রতনদীতালতলী ইউনিয়নের চান্দেও হাওলা গ্রামের সুন্দর আলী খা (৬০) বলেন, এইবার দেড় একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করছি। আমার ক্ষ্যাতের ধানের শীষ বাইরাইছে। আশা করি আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে ধান পাকবে। কিন্তু এমন সময় রোগ দেখা দিছে। দোকান দিয়া অনেক টাহার বালাইনাশক দিছি। কিন্তুরোগ ঠেকাইতে পারি নাই। অর্ধেক ধানই চিডা (চিটা) হইয়া যাইবে। এহন ফলন অর্ধেক হইবে বইল্যা মনে হয় না।একই ইউনিয়নের মেমসাহেব গ্রামের মানিক মিয়া বলেন, আমার ক্ষেত তো দেখলেনই। কী রোগ অইছে কইতে পারি না। এমন অবস্থা আগে দেহি নাই। এই রোগে ধান চিটা অইয়া যায়।চরকাজল গ্রামের দুলাল আকন সংবাদকর্মীদের জানান, আর দিন কয়েকের মধ্যে ধান কাটার কাজ শুরু হওয়ার আশা ছিল। এমন সময়ে ক্ষেতে শীষ মরা রোগ দেখা দিয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে ধান পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যাচ্ছে ধানের শীষগুলো মরে শুকিয়ে গেছে। ফলে তারা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরএম সাইফুল্লাহ বলেন, কিছু এলাকায় এ রোগ দেখা দিয়েছে। তবে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেনি। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, প্রচণ্ড খরা, ভ্যাপসা গরম ও রাতে ঠাণ্ডা পড়ার কারণে ব্লাস্ট, ব্যাকটিরিয়াল পেলিক্যাল ব্লাইট ও হট ইঞ্জুরিসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। তবে কৃষি বিভাগের কর্মীরা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছে এবং রোগ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করা যায় পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা ব্যবস্থা নিলে রোগ আর বাড়বে না। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফলন কিছুটা কমে যেতে পারে।