করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়া সারাতে ব্যবহৃত দুটি ওষুধের কার্যকারিতা নির্ধারণে পরীক্ষা শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যে।
যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের ৪০ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীর উপর এ পরীক্ষা চালানো হবে। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হননি এমন স্বাস্থ্যকর্মীরা এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের তিন মাস ধরে ক্লোরোকুইন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বা একটি প্ল্যাসেবো দেয়া হবে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, করোনার চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারের কথা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন অনেকে। যদিও করোনা সারাতে এর কোনো কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ওষুধটি অনিরাপদ বলেও দাবি করেছেন অনেক চিকিৎসক।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প করোনা সংক্রমণ এড়াতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিচ্ছেন বলে জানান। তার এই ঘোষণা তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছে। এর আগেও তিনি ওষুধটি করোনা প্রতিরোধে কার্যকর বলে দাবি করেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্টো বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভুল ব্যবহারে মানুষের জন্য এটা ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিবিসি জানিয়েছে, চার মহাদেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, ক্যাম্বোডিয়া ও ইতালিতেও গবেষকরা ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালাবেন। যুক্তরাজ্যে ইংল্যান্ডের ব্রাইটন ও অক্সফোর্ডে এ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্রাইটন অ্যান্ড সাসেক্স ইউনিভার্সিটি হসপিটালস এবং অক্সফোর্ডের জন র্যাডক্লিফ হসপিটালে অংশগ্রহণকারীদের তালিকাভুক্ত করা শুরুর কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাজ্যে মোট ২৫টি জায়গায় এ পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে অংশগ্রহণকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের হয়তো হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বা একটি প্ল্যাসেবো দেয়া হবে। করোনা রোগীদের দেখাশোনা করছেন কিন্তু এখনো করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হননি এমন সকল স্বাস্থ্যকর্মী এ পরীক্ষার অংশ নিতে পারবেন।
প্রত্যাশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষের দিকে সেখানের পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে। অন্যদিকে, এশিয়ায় অংশগ্রহণকারীদের ক্লোরোকুইন বা প্ল্যাসেবো দেয়া হবে। পরীক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ক্লোরোকুইন বা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায় কিনা।
পরীক্ষার প্রধান গবেষকদের একজন, ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের অধ্যাপক নিকোলাস হোয়াইট বলেন, ওষুধ দুটি করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর কিনা তা তারা জানেন না। তবে এ ধরনের বিশাল আকারের নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার মাধ্যমে সেটা পরিষ্কার হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।
অপর এক গবেষক, ব্রাইটন অ্যান্ড সাসেক্স মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক মার্টিন লিওয়িলিন বলেন, বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ ও কার্যকরী কোনো টিকা আসতে অনেক দেরি হতে পারে। ক্লোরোকুইন বা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতো সহনীয় কোনো ওষুধ যদি করোনা সংক্রমণের হার কমাতে পারে তাহলে সেটা খুব চমৎকার ব্যাপার হবে।
প্রসঙ্গত, ওষুধ দুটি জ্বর ও প্রদাহ কমাতে খুবই কার্যকরী। সাধারণত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হিসেবে পরিচিতি থাকলেও রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস ও লুপাস সারাতেও এগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে।