মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের অফ-গ্রীড অঞ্চল সমূহে বিশেষ করে চর ও দ্বীপ অঞ্চলে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। সরকার সারা দেশে সব এলাকায় সুষম বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়ায় বর্তমানে ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন চরকাজল ও চরবিশ্বাসে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা। এর ফলে ওই এলাকায় কুপি বাতির পরিবর্তে জ্বলবে বিদ্যুতের বাতি। আলোয় আলোয় ভরে উঠবে এ এলাকার ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট।
এর সাথে অবসান হবে অন্ধকার, উদ্ভাসিত হবে আলো। ইউনিয়ন দু’টিতে প্রায় এক লক্ষ মানুষের বসবাস। তারা প্রতিক্ষার প্রহর গুণছিলেন কখন শেষ হবে আদিম যুগের পদ্ধতি কুপি বাতির। এ দ্বীপ ইউনিয়ন দু’টির মানুষের কাছে এটি একটি বড় পাওয়া। ১০ জুনকে স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য চরকাজল চরবিশ্বাস এই দ্বীপাঞ্চল দু’টির অধিবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে এলাকাকে। ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবুল বাশার জানান, চরকাজল, চরবিশ্বাস, চরবোরহান, চরমোন্তাজ ও দশমিনার একাংশের ৪৫টি গ্রামের ২২হাজার ৬৬৬ জন গ্রাহকের জন্য উপকেন্দ্র, ৪ কিলোমিটার সাবমেরিণ ক্যাবল, ট্রান্সফরমার, ৭৯২ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ১৫৭ দশমিক ৪১ কোটি টাকা ব্যয় হয়। প্রতি গ্রাহকের পিছনে সরকারের ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কে আলী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মিতুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বাবা, বড় ভাই ও আমরা হেরিকেন ও কুপি বাতি জ্বালিয়ে লেখাপড়া করেছি । কিছু দিনের জন্য সৌর বিদ্যুতও পেয়েছি, তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম, এখন বিদ্যুৎ এসছে এটা স্বপ্নের মত লাগছে।
আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও করতে পারব লেখাপড়া। বর্তমান এমপি শাহজাদা ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের মহাসড়কে যোগ দিতে পেরে আমরা নিজেদেরক ধন্য মনে করছি।’ চর আগস্তী গ্রামের লক্ষী রানী (৫৬) বলেন, ‘আমাগো এই চরে কারেন্ট আইবে এ কোন দিনও হপ্পনেও (স্বপ্নেও) ভাবি নাই। আমাগো এ্যাহোন আর কারেন্টের কাজের লাইগ্যা গলাচিপায় যাওন লাগবে না। ভগবান শেখ হাসিনারে আরো বেশি দিন বাচাইয়া রাহুক।’ চরবিশ্বাস ইউনিয়নের হাজী কেরামত আলী ডিগ্রী কলেজ মাঠে চরবিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সির সভাপতিত্বে ও চরকাজল ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রুবেল মোল্লার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মু. শাহীন শাহ, ভোলা পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবুল বাশার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ দে ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা টিটো।
এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি হাজী মু. মজিবর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার মু. শাহ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক তপন বিশ্বাস , মো. আলমগীর হোসেন প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসএম শাহজাদা বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি ভিশন ছিল ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শুনেছেন নৌকার ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত এই এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, তাই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অবহেলিত এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন চরকাজল ও চরবিশ্বাসের লক্ষাধিক মানুষকে বিদ্যুতের সুবিধা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে এই ভাটির দেশের দ্বীপাঞ্চলের মানুষের পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’