পৃথিবীর ভয়াবহ এক ভাইরাসের নাম করোনা। যা গোটা বিশ্বকে নড়েচড়ে বসিয়েছে। বিশ্বের বুকে বয়ে গেছে মৃত্যুর মিছিল।
করোনার কারণে দেশে দেশে নেয়া হয়েছে নানা ধরণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা। খুব কম সময়ের মধ্যে নতুন কোন ভাইরাসের এন্টি ভাইরাস আবিষ্কার করা সহজ না হলেও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো চেষ্টা করে একটি জায়গায় পৌঁছেছে। যা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য আশির্বাাদ স্বরুপ।
কয়েক দফা লগডাউন ও নানামুখি কর্মসূচি দিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে ভাইরাসটি প্রবেশ করতে পারে বিধায় মাস্ক পরিধান ও বেশিবেশি হাত ধোয়া ছিলো এর মধ্যে অন্যতম। সরকারের নানামুখি জল্পনা-কল্পনার পরে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে করোনা। তবুও যেনো করোনা ভাইরাসটি ক্যান্সারের ন্যায়।
দফায় দফায় লকডাউনের পরে শেষমেস দেশের সবকিছু একটি সীমাবদ্ধতার মধ্যে খুলে দেয়া হলেও তারিখের পর তারিখ দিয়েও খোলা হয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাঙ্গালি জাতি কর্মঠ, এটা শক্ত একটি বাস্তবতা। তবে লেখাপড়ায় যথেস্ট অলসতা ও ঘাটতি বরাবরই। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। যা শিক্ষা ব্যবস্থা নাজুকের অন্যতম কারণ।
কোচিং কিংবা পেরাইভেটকে গুরুত্ব দেয়া হলেও ক্লাশকে গুরুত্ব কমই দেয়া হয়। লেখাপড়ায় যে ছাত্রটি সবথেকে মেধাশূণ্য; ঠিকঠাক ক্লাশে সেও একদিন বেশ পটু হয়ে যায়। এমন সত্যটি ফেলে দেয়া যায়না। ইন্টারমিডিয়েট (এইচএসসি) অটোপাসে হলেও এর ধারাবাহিকতা থাকবেনা সেটা স্বাভাবিক। আমরা ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে শিক্ষার মেরুদন্ড ভাঙ্গছে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যায়। জীবনের চেয়ে কোন কিছুই মূলবান নয়।
তবুও বেঁচে থাকতে হলে অনেক কিছুই প্রয়োজন। অনলাইন ক্লাশের নামে করোনার এ দীর্ঘ বন্ধে শিক্ষার্থীরা মেতেছে নানা ধরণের অনলাইন ব্যবসা ও ভয়াবহ গেমস্ এ। এতে স্বাভাবিকভাবেই পড়াশুনা ভেস্তে যাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীরাও। যা ভবিষ্যতে শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় আনতে পারে। হতে পারে বিশ্বে রেকর্ডকৃত মেধাশূণ্য দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়।
আজ দীর্ঘ সময়ের বন্ধে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা কতটা ইতিবাচক হয়েছে, তা একমাত্র শিক্ষার্থীরাই অবগত। ভবিষ্যতে জাতি যেনো শিক্ষায় মেরুদন্ডহীন হয়ে না পড়ে, অনতিবিলম্বে এমন ব্যবস্থা গ্রহন করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। তাই শিক্ষার্থীদের করোনার এন্টিটিকা নিশ্চিত করে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সময়ের দাবী। নয়তো ভুলতে হবে নিজের ক্লাশের কথা, রোল নম্বরের কথা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা।
শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তি কিংবা অন্য যে কোন পন্থা ব্যবহার করে হলেও শিক্ষার মানদন্ড ঠিক রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মেধাশূণ্য দেশ হয়ে হাসির পাত্র না হতে হয়, সেদিকে যথেস্ট খেয়াল দিতে হবে। নতুবা নেপোলিয়নের “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দেও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি দিবো” এ প্রবাদ বাক্যটি হারিয়ে যাবে অতল সাগরে। সকল ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হোক, নেয়া হোক না নেয়া ক্লাশ।
কোচিং কিংবা পেরাইভেট নয়; বরং ক্লাশই হোক জ্ঞানের সুনির্দিস্ট স্থান। অচিরেই শিক্ষা ব্যবস্থায় আসবে সুন্দর ও মনোরম এক উন্নত ব্যবস্থা। হারাবেনা মেধা, কমবেনা শিক্ষার মূল ধারা। খুলবে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থী অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষামূলক বিষয় নিয়ে গবেষণা হবে দেশ উন্নয়নের এক ব্যতিক্রমী ও অন্যতম পন্থা। যে গবেষণা বিশ্বের বুকে এক নজিরবিহীন হয়ে থাকবে। এমন আশায় পথ চেয়ে রইল দেশের সকল শিক্ষার্থী।
লেখক : শিক্ষার্থী, বরগুনা সরকারি কলেজ।