December 23, 2024, 5:58 am

ই-কমার্স নির্দেশিকা জারি : যা বলছে বাণিজ্যমন্ত্রী

নিজেস্ব প্রতিবেদক।
  • Update Time : Tuesday, July 6, 2021,
  • 157 Time View
ই-কমার্স নির্দেশিকা জারি যা বলছে বাণিজ্যমন্ত্রীtmnews71

অনলাইনে পণ্য কেনার জন্য গ্রাহক মূল্য পরিশোধের পর নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে, মূল্য পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে। দেশে প্রথমবারের মতো জারি করা ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকায় এই শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে।  নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে ‘এমএলএম’ পরিচালনা করা যাবে না। একইসঙ্গে পণ্যের পুরো দাম পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারিম্যান কিংবা কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করে ক্রেতাকে জানিয়ে দেয়া এবং পণ্যের অবস্থান ‘ট্র্যাক’করতে হবে।

মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে ৬৯টি নির্দেশিকা গেজেট আকারে পড়ে শোনান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে দিনে দিনে ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার ঘটছে। ই-কমার্সে সুষ্ঠু এবং প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে, একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বিরাজ করে, সেজন্য সব পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এই নির্দেশিকা করা হয়েছে।

পণ্যের পুরো দাম ক্রেতা পরিশোধের পর যদি ওই ক্রেতা এবং বিক্রেতা একই শহরে থাকলে সর্বোচ্চ ৫ দিন এবং ভিন্ন শহরে থাকলে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য হস্তান্তর করা নিশ্চিত করতে হবে।

নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ই-কমার্স কোম্পানিগুলো ১০ শতাংশের বেশি অগ্রিম টাকা নিতে পারবে না। কোনো ‘ক্যাশব্যাক’বা ‘ডিসকাউন্টের’ঘোষণা দিলে তা নিজেদের ওয়ালেটে না রেখে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আর প্রতারিত বা সংক্ষুব্ধ হলে দেশের প্রচলিত বিচারালয়ের পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন ক্রেতারা।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, করোনা মহামারিতে অনলাইনে বেচাকেনা প্রসার ঘটছে। এই সুযোগে অনেকে বেশি ডিসকাউন্ট দিচ্ছেন। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, এর ফলে অনলাইন ব্যবসায় বড় ধরনের বিপর্যয় আসতে পারে। এখন সুর্নিদিষ্ট একটি নির্দেশনা থাকায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে একটা ভারসাম্য চলে আসবে।

জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০২০ অনুযায়ী এই নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রথম ধাপ, প্রয়োজনে সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ রয়েছে।

নির্দেশিকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধারা

পণ্য বিপণনের শর্তগুলো পণ্যের পাশে বাংলা ভাষায় স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে। বাংলার পাশাপাশি অন্য ভাষায়ও লেখা যাবে। প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো শর্ত জুড়ে দেওয়া যাবে না।

ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপণন করা পণ্যের সব বিবরণ ও শর্ত উল্লেখ থাকতে হবে। ডিজিটাল মাধ্যমে ‘এমএলএম’ পরিচালনা করা যাবে না। ‘জুয়া’ বা ‘অনলাইন বেটিংয়ের’ আয়োজন করা যাবে না।

ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। দাহ্য পদার্থ বিক্রির ক্ষেত্রে লাগবে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স। বিক্রেতার ওয়েবসাইটে বিশেষ সফটওয়্যার বা কুকিজ থাকলে আগেই ক্রেতাকে জানাতে হবে।

গ্রাহকের কোনো ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে হলে সেজন্য আগেই তার সম্মতি নিতে হবে। ‘লটারি’ বা ‘র্যা ফেল ড্র’ করতে হলে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে।

সব ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হতে পারে, সেসব বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া করা যাবে না। ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের অর্থ ব্যবসা করা যাবে না। ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য বা সেবা কিনতে বাধ্য করা যাবে না।

ডিজিটাল ব্যবসা পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন, টিআইএন, ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা পারসোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্টের কোনো একটি গ্রহণ করতে হবে এবং তা ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রদর্শন করতে হবে।

লেনদেনের সব তথ্য অন্তত ছয় বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। অন্য কোনো চুক্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট মার্কেট প্লেসে পণ্য বিক্রয় করার পর দাম বুঝে পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে বিক্রেতাকে তা দিয়ে দিতে হবে।

মার্কেট প্লেসকে বিক্রেতাদের নাম, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

দেশের ভেতরে অবস্থান করছে এমন পণ্যের জন্যই কেবল অগ্রিম মূল্য নেওয়া যাবে। মূল্য গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হস্তান্তর করা না গেলে ১০ শতাংশের বেশি মূল্য নেওয়া যাবে না। এর বেশি মূল্য নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘এসক্রো সার্ভিসের’ মাধ্যমে নিতে হবে।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ভোক্তার অভিযোগের সমাধান করতে একজন ‘কম্প্লায়েন্স অফিসার’ নিয়োগ দিতে হবে। তিনি ভোক্তার অভিযোগ নিয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করবেন। অভিযোগপ্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা সমাধান করে ফোন, ইমেইল অথবা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে।

ক্রয়াদেশ গ্রহণ করার পর পণ্য বা সেবা দিতে না পারলে অর্ডারের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা ক্রেতাকে জানাতে হবে। আর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টাকা ফেরত দিতে হবে।

প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংক্ষুব্ধ গ্রাহক ভোক্তা অধিকার কিংবা আদালতে যেতে পারবেন।

ডেবিড, ক্রেডিট, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যংকিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতাকে সমপরিমাণ অর্থ ফেরত দিতে হবে। যে মাধ্যমে টাকা এসেছে ফেরত যাবে একই মাধ্যমে এবং কোনো চার্জ প্রযোজ্য হলে তা মার্কেট প্লেস বা বিক্রেতা বহন করবে। তবে ক্রেতা যথাসময়ে পণ্য গ্রহণে ব্যর্থ হলে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

যে কোনো মূল্য হ্রাসের ঘোষণা বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করতে হবে। ‘অফারমূল্য’ পরিশোধের পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাশব্যাক কার্যকর করতে হবে। বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার পর ‘ক্যাশব্যাক অফার’ বা ‘মূল্যছাড়ের’ ঘোষিত অর্থ কোনো ই কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়ালেটে জমা রাখা যাবে না।

এছাড়া পণ্যের বা সেবার বিষয়ে মতামত বা রেটিং জানানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে ওয়েবসাইটে। এসব মতামত মুছে ফেলা যাবে না। আর নির্দেশিকা পালন না করলে অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি নিবন্ধন, ভ্যাট নিবন্ধন সরকার বাতিল করে দেবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71