পটুয়াখালী গলাচিপা উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন চরকাজল ও চরবিশ্বাসে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন দেওয়া হয়েছে। এ উপজেলার ৪৫টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে বিদ্যুতে আলোকিত চরকাজল মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের অফ-গ্রিড অঞ্চলসমূহে বিশেষ করে চর ও দ্বীপ অঞ্চলে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। সরকার সারা দেশে সব এলাকায় সুষম বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়ায় বর্তমানে ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন চরকাজল ও চরবিশ্বাসের ১০ জনকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করা হয়। ওই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপাঞ্চল দুটিতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের অফ-গ্রিড উপজেলাগুলোর দ্বীপাঞ্চলসমূহে মুজিববর্ষের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড ১০০% বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে। গ্রিডের ৪৬১টি উপজেলা ১০০% বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। মুজিববর্ষে ১০৫৯টি গ্রাম একই প্রোগ্রামের আওতায় আসছে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, অফ-গ্রিড এলাকাগুলো দেশের ৬৮টি উপজেলায় অবস্থিত।
এখন ওই এলাকায় কুপি বাতির পরিবর্তে জ্বলছে বিদ্যুতের বাতি। এ দ্বীপ ইউনিয়ন দুটির মানুষের কাছে এটি একটি বড় পাওয়া। গত ১০ জুন থেকে আলোয় আলোয় ভরে উঠেছে এ এলাকার ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট। এর সঙ্গে অবসান হয়েছে অন্ধকার, উদ্ভাসিত হয়েছে আলো। ইউনিয়ন দুটিতে প্রায় ১ লাখ মানুষের বসবাস। তারা খুশি আদিম যুগের পদ্ধতি কুপি বাতির পরিবর্তে বিদ্যুতের বাতি ব্যবহারে। চর বিশ্বাস ইউনিয়নের সায়েম গাজী (৪০) জানান, ‘আমাদের এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ও প্রচেষ্টায় সাগর-নদী বেষ্টিত দ্বীপ অঞ্চল দুটির মানুষ আজ মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের এক মাইলফলকের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বীপ ইউনিয়ন দুটির দায়িত্বে থাকা ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবুল বাশার জানান, নদীতে সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে এ বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এটি দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম সাবমেরিন ক্যাবল লাইন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা। তিনি আরও জানান, ভোলা জেলার চর মুজিবে উপকেন্দ্র করে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন চর কাজল ও চর বিশ্বাস, দশমিনা উপজেলার চর বোরহান, চর হাদি ও রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মোন্তাজ ইউনিয়নে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন দেওয়া হয়েছে। এসব ইউনিয়নে মোট ৪৫টি গ্রাম রয়েছে। গ্রামগুলো বিদ্যুতায়িত হলে মোট গ্রাহক সংখ্যা হবে ২২ হাজার ৬৬৬ জন। এতে প্রয়োজন হয়েছে ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। ওই অঞ্চলের একমাত্র কে আলী কলেজের শিক্ষার্থী মো. মিতুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বাবা, বড় ভাই ও আমরা কুপি বাতিতে লেখাপড়া করছি। কিছু দিনের জন্য সৌর বিদ্যুৎও পেয়েছি, তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম, এখন বিদ্যুৎ আসবে এটা স্বপ্নের মতো লাগছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও করতে পারব লেখাপড়া। বর্তমান এমপি শাহজাদা ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের মহাসড়কে যোগ দিতে পেরে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। বিশেষ করে আইসিটি শিক্ষা, কৃষি ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনবে বলে মনে করি।’ চর বিশ্বাস ইউনিয়নের চর আগস্তী হিন্দু গ্রামের সুগন্ধা রানী বলেন, ‘আমাগো দ্যাশে কারেন্ট আইবে এ কোনো দিনও হপ্পনেও ভাবি নাই। আমাগো অ্যাহোন আর কারেন্টের কাজের লাইগ্যা গলাচিপার বাড়ি যাওয়া লাগবে না। শেখ হাসিনারে ভগবান আরও বাঁচাইয়া রাহুক। আমাগো আরও কিছু দেউক। পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, ‘বাংদেশ আওমী লীগের একটি ভিশন ছিল ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। দেশের সব জায়গায় যখন আলো ঝলমল করছিল তখন এ এলাকা ছিল অন্ধকার। নানা কারণে রয়েছে অবহেলিতও। এ অঞ্চলে সব থাকলেও বঞ্চিত ছিল আলো থেকে। এতে সৃষ্টি হবে নানামুখী কর্ম ক্ষেত্রের। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আলো পৌঁছে দিয়েছেন। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। এখানে এখন গড়ে উঠবে মাঝারি ও ক্ষুদ্র আকারের শিল্প কারখানা।