পিতা,মাতার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। জীবনে যতই অভাব অনটন থাক সন্তান জন্মের পর থেকে বাবা মা সন্তানকে বিন্দু পরিমান অভাব বুঝতে দেয় না। শত কষ্টেও সন্তানকে লালন পালন করে বড় করে সমাজে মানুষের মত মানুষ করে তোলে বাবা মা।
আর এই বাবা মা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায়, চলতে ফিরতে পারে না। বয়সের ভারে শরীর আর কাজ করে না তখন অনেক সন্তান রয়েছে যারা বাবা মা এর দেখাশোনা করে না। অবহেলা করে পিতা মাতার প্রতি। জীবনের শেষ সময়ে বাবা মা কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় না হয় আলাদা করে দেয়। এই সব করুণ কাহিনী আমাদের সমাজে প্রায় নিত্য দিনের বিষয়।
কিন্তু অপরদিকে হাজারো কষ্টে, অভাব, অনটনে যে সন্তান তার বাবা, মা কে কষ্ট না দিয়ে সেবা যত্ন ও লালন পালন করে। অভাবের মধ্যেও মা বাবা’র বিন্দু পরিমান অবহেলা করে না তেমন সন্তানদের ফল,শুকনো খাদ্য উপহার ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা ভূমি অফিসার প্রিতম শাহা।
রাণীশংকৈল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এটি একটি ব্যাতিক্রম উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ভ‚মি অফিসার প্রিতম শাহা। প্রতি সপ্তাহে নিজ অর্থায়নে ২ জন মা এর সন্তানকে তিনি ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, যে সন্তানেরা অভাবের মাঝেও মা, বাবার সেবা, যত্ন ও দেখভাল করেন।
সোমবার রাণীশংকৈল হাড়িয়া (মলানী) গ্রামে প্রিতম শাহ নিজে ফুলের তোরা ও ফলের ঝুড়ি নিয়ে উপস্থিত হোন মৃত হযরত আলীর ছেলে মজিবুর রহমানের বাসায়। মজিবর রহমান অভাবের মাঝে তার মা মোছা: সহরবানু (৮৫) এর সুন্দরভাবে দেখাশোনা করেন ও যত্ন নেন। এমন খবর পাওয়ার পরেই সেখানে উপস্থিত হয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রিতম শাহা।
এসময় এলাকার অনেকেই প্রিতম শাহা এর এমন উদ্যেগকে সাধুবাদ জানান। তার সাথে এর পর থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা পাওয়ার জন্যও অনেকে প্রিতম শাহকে তাদের বাবা মা এর সেবা যত্ন আরো ভালো ভাবে করবেন বলে জানান। প্রিতম শাহাও তাদের কে বাবা মা এর সেবা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন।
এসময় এলাকাবাসী জানান, বাবা মা এর সেবা যত্ন করা সন্তাদের ধর্ম। তার পরেও দেখা যায় অভাব অনটনের কারনে পিতা মাতার প্রতি অবহেলা হয়েই যায়। কিন্তু সন্তানের বাবা মা এর প্রতি যে দায়িত্ব তা বুঝিয়ে দিলেন ভ‚মি অফিসার প্রিতম শাহা। সন্তান যেন তার বাবা মা কে বিন্দু পরিমান অবহেলা না করে তার জন্য অনুরোধ করলেন তিনি সকলকে। তার সাথে বাবা মা এর সেবা করলে পুরস্কার পাওয়া যাবে সেটাও সকলকে জানালেন তিনি।
ফুলেল শুভেচ্ছা পাওয়া মজিবর রহমান বলেন, আমি শুভেচ্ছা পাওয়ার জন্য মা এর সেবা করি নাই। আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েছে। এটা আমার ধর্ম আমার মা এর সেবা করা। তবে প্রিতম শাহা স্যারের উদ্যেগ অনেক সুন্দর ও প্রশংসনীয়। তিনার এই শুভেচ্ছা পাওয়ার জন্য হলেও এখন অনেকে বাবা মা এর সেবা করবে।
এর পরে রাণীশংকৈল ভূমি অফিসার প্রিতম শাহা নেকমরদ এলাকায় আরেকটি পরিবারের সন্তানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ও ফল, শুকনো খাদ্য সামগ্রী উপহার দেন।
সেখানে ভূমি অফিসার প্রিতম শাহা এর কাছে এমন উদ্যেগ এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিতা মাতার সেবা, যত্ন করা সন্তানের ধর্ম। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় এখন অনেক সন্তান বাবা মা এর সেবা করে না। অবহেলা, অযত্নে অনেক পিতা মাতা সন্তানের বিরুদ্ধে আমার কাছে নালিশ নিয়ে আসে। এসব কিছু দেখে আমার মন কেদেঁ ওঠে। তাই আমি যে সকল সন্তান বাবা মা এর সেবা যত্ন করে তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাই। এবং সমাজের সকলকে আহ্বান জানাই বাবা মা এর সেবা করার। আর কোন বাবা মা যেন সন্তানের কাছে অবহেলার পাত্র না হয়।