December 24, 2024, 1:14 am

আলহামদুলিল্লাহ, তৃতীয় নমুনা পরীক্ষা রিপোর্ট হাতে পেলাম

Reporter Name
  • Update Time : Sunday, May 31, 2020,
  • 148 Time View

আলহামদুলিল্লাহ। এই মাত্র আমার কোভিড -১৯ এর তৃতীয় নমুনা পরীক্ষা রিপোর্ট হাতে পেলাম। দ্বিতীয় রিপোর্টের মত তৃতীয় রিপোর্টও নেগেটিভ এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমি এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ মুক্ত।

আমার কোভিড -১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর ২১ তারিখে বাসার একটি কক্ষে একাকী আইসোলেশনে থেকে কঠোরভাবে অত্যন্ত মনোবল সহকারে করোনা প্রতিরোধের নিয়ম কানুন মেনে চলি। তবে আমি করোনা পজিটিভ হলেও আমার শরীরে করোনা আক্রান্তের কোনো উপসর্গ ছিল না। তথাপি আমি টেলিমেডিসিনের সহায়তায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত গরম পানির গার্গল করা, দিন রাতে অন্তত ৩ বার নাকমুখে গরম পানির বাস্প (ভাপ) নেয়া । কিছু সময় পর পর চিনি ছাড়া আদা, দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, লেবু মিশ্রিত চা খেয়েছি।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, জিংক, এবং অন্যান্য ভিটামিন ও মিনরেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রয়োজনের তুলনায় একটু পানি বেশি খেয়েছি। ঠান্ডা খাবার স্পর্শ করিনি। দিনে ১ বার ২৫ -৩০ মিনিট শারীরিক হাল্কা ব্যায়াম করেছি। বই পড়েছি, টেলিভিশনে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান উপভোগ করেছি। গতানুগতিক ভাবে প্রায় সময়ই ফেসবুকে বন্ধুদের সংগে ছিলাম। নিয়মিত সালাত আদায় করেছি। তবে সত্য বলতে কি জায়গা পরিবর্তন হওয়ায় একটু ঘুমে বিঘ্ন ঘটেছে।

আমি আইসোলেশনে থাকাকালীন বাড়িতে অবস্থানরত আমার স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যাদের প্রচুর সাপোর্ট পেয়েছি। ফেসবুক ফেমিলি গ্রুপে প্রায়ই তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার মা, ভাই, বোন, শ্যালক, শ্যালক পত্নী, অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের সংগে ফোনে নিয়মিত কথা হয়েছে। আমা ঊর্ধতন কর্মকর্তা, সুপ্রিয় সহকর্মী এবং লক্ষাধিক ফেসবুক বন্ধুদের আমাকে নিয়ে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, ভালোবাসা আমাকে অবিভূত এবং বিস্মিত করেছে। আমার নিজ জেলা পাবনা পূর্ববর্তী কর্মস্থল বগুড়া, নওগাঁ এবং জয়পুরহাটের হাজার হাজার মানুষ ফেসবুক কিংবা ফোনে সাহস জুগিয়েছেন। দেশের বাইরে থেকে অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি আমার খোঁজ খবর নিয়েছেন।

আমার মত অতি নগন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর জন্য পাবনা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, রংপুরসহ অনেক জেলায় অসংখ্য মসজিদে জমাতুল বিদার দিন আশু রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া হয়েছে। অসংখ্য শুভাকাংখী ফেসবুক টাইম লাইন, মেসেঞ্জার এবং সেল ফোনে যোগাযোগ করেছেন। আমি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করছি ইচ্ছে থাকা সত্তেও আমি যথাযথ response করতে পারিনি। এ জন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আমার প্রতি আপনাদের উদ্বেগ, আবেগ, মায়া, মমতা, ভালবাসা আমাকে আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ করেছে।

আমরা বৈশ্বিক করোনা মহামারি মোকাবিলা করছি। যেহেতু করোনার এখনো কোন ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়নি কাজেই করোনা প্রতিরোধ বা প্রতিহত করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে। কাজেই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে।সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে চলতে হবে। যে কোন কাজে বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। আপাতত পারিবারিক, সামাজি, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক যেকোন ধরনের সমাবেশ বা উৎসবে জনসমাবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া, জন্মদিন, বিবাহ বা যেকোন ধরনের উৎসব এড়িয়ে চলা জরুরি। করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যুহার মাত্র ১.৩৭%। করোনার চেয়ে বাংলাদেশে ক্যানসার, হৃদরোগ, কিডনি ফেইলিওর, লিভার সিরোসিস, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এমনকি সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক অনেক বেশি মানুষ মারা যায়।

কাজেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে অযথা আতংকিত না হয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। করোনা ভাইরাস যেহেতু মারত্মক ছোঁয়াছে কাজেই আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। বাংলাদেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্তদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে না। আমি যেদিন কোভিড পজিটিভ হই সেদিন সংগে ২৩ জন RAB সদস্যের মধ্যে মাত্র ২ জন RAB সদস্যের সামান্য উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়েছে। পুলিশে সাড়ে ৪ হাজার আক্রান্ত হলেও ইতিমধ্যেই সাড়ে এগারশ সুস্থ হয়েছে। এদের বড় অংশ নুতন উদ্যোমে কাজে যোগ দিয়েছেন। কাজেই করোনা আক্রান্ত হলেই আপনি মনোবল হারাবেন না ভয় পাবেন না। প্যানিক্ট ডিস অর্ডারের কারণে অনেক সময় মানুষ নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় পতিত হয়। যেহেতু বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু হচ্ছে, সকল মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, বেসরকারি অফিস আদালত খুলে দেয়া হচ্ছে কাজেই আমাদের কঠোরভাবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই।

আমি এবং আমার RAB -4 এর সুপ্রিয় সহকর্মীগণ জনগণের সামাজিক, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা, বাধ্যতামূলেক ভাবে মাস্ক পরিধান করা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লকডাউন করা, করোনা রোগীদের সহায়তা করা এবং মানবিক ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে করোনা পজিটিভ হয়েছিলাম। আপনাদের সকলের দোয়ার বরকতে পরম করুনাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কৃপায় সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই আমি করোনা মুক্ত হয়েছি। WHO কতৃক প্রনীত করোনা চিকিৎসা প্রটোকল অনুযায়ী আমাকে আরও কয়েকদিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ইনশাল্লাহ নির্ধারিত হোম কোয়ারেন্টাইন শেষে খুব শিঘ্রই আমি পুনরায় করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে জনতার পাশে হাজির হবো। নির্দিষ্ট কোয়ারেন্টাইন শেষে গুরুতর করোনা আক্রান্ত রোগীকে আমি আমার রক্তের প্লাজমা উপহার দিতে সংকল্পবদ্ধ । আমি আবারও বলছি- ইনশাল্লাহ অচিরেই করোনা আঁধার কেটে যাবে। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।

লেখক : র‌্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71