অনলাইন ডেস্ক
সড়ক পরিবহনে যাত্রী ভাড়া এক লাফে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তকে “গণবিরোধী” আখ্যা দিয়েছে বাম রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ।
এর প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে তারা।
তাছাড়া, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক হাসানুক হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ এবং রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিও সরকারের এ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে সাধারণ মানুষের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে আভিহিত করেছে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গণমানুষের স্বার্থের বিপরীতে পরিবহন মালিকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার সারাদেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বাম জোটের সকল জেলা-উপজেলা শাখাকে এ কর্মসূচি পালন করতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশের লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন ও বেকার হয়ে পড়েছেন। এমতাবস্থায় বাসের বর্ধিত ভাড়া মানা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপের সমালোচনা করেন বাম জোটের এ নেতা। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক তৃতীয়াংশে নেমে আসার পরও আমাদের দেশে তেলের দাম কমানো হয়নি। জ্বালানির দাম কমালে ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে না। বাসের ভাড়া বৃদ্ধি না করে বিভিন্ন সড়কে সরকারি টোল আদায় বন্ধ, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কমানোর দাবি করেন এ বাম নেতা।
এদিকে বাস ভাড়া বাড়ানোকে তামাশা উল্লেখ করে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, সরকারের গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। করোনা সংকটে জনগণ এমনিতেই বিপর্যস্ত। এ সময়ে ভাড়া বাড়ানো সম্পূর্ণ অন্যায়, অযৌক্তিক ও জনগণের সাথে এক নির্মম তামাশা ছাড়া কিছুই না।
তিনি বলেন, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি মানা সম্ভব নয়। এটা সরকারকে প্রত্যাহার করতে হবে। বাস মালিকের যদি ক্ষতি হয় তা সরকার ভর্তুকি দিয়ে পূরণ করুক, সরকার কোনো দায়িত্ব না নিয়ে সব জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দেবে কেন?
ওদিকে, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাস ভাড়া বৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মানা যায় না। এটাকে আমরা প্রত্যাহার করতে বলেছি। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে বাস চালানো হলে একটি বাসের আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে ভাড়া ৫০% ভাগ বৃদ্ধি দাবিও এই সংকটকালে সাধারণ মানুষের প্রতি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র শামিল।
ক্ষমতাসীন জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরীর সভাপতি আবুল হোসাইন বলেন, লকডাউন প্রত্যাহারের পর গণপরিবহনের দ্বিগুণ ভাড়া বৃদ্ধি করোনাগ্রস্ত নগরবাসীর জন্য একটি বাড়তি বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ ৬৬ দিন লকডাউনে নাগরিকদের জীবন-জীবিকা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। আয়-রোজগার না থাকায় মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তসহ দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকার যে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে আরও অনেক সময় প্রয়োজন। নগরবাসীর আয়-রোজগার বৃদ্ধির জন্য সরকারকে নানামুখী কর্মসূচি নিতে হবে।
উল্লেখ্য, রোববার (৩১ মে) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভাড়ার (যাত্রীপ্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ১.৪২ টাকা) ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো। এছাড়া একজন যাত্রীকে বাস বা মিনিবাসের পাশাপাশি দুইটি আসনের একটি আসনে বসিয়ে অপর আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।