ডাক বিভাগের নাম ব্যবহার করে আসলেও মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) নগদের মালিকানার সাথে ডাক বিভাগের কোন সম্পর্ক নেই। এত দিন পরিচালনা করছিল থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড। পরে এটি নাম পরিবর্তন করে ‘নগদ লিমিটেড’ নাম ধারণ করে।
এই পরিস্থিতিতে নগদ লিমিটেডের নামে ব্যাংকে ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট হিসাব খোলার আগে ডাক বিভাগের অনুমোদন নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পাশাপাশি নগদের হিসাব খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে বলে অন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেবা চালু রাখতে নগদকে এই হিসাব অবশ্যই খুলতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে থার্ড ওয়েভের নামে এ হিসাব খোলা হয়েছিল।
ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট হিসাব এমন এক ধরনের সংরক্ষিত হিসাব, যেখানে নগদ কর্তৃক ইস্যুকৃত ইলেকট্রনিক মুদ্রার বিপরীতে গ্রাহকের অর্থ জমা রাখা হয়। অথবা নগদ সেবা পরিচালনাকারী বা ওই হিসাব পরিচালনার জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহীতার অর্থ জমা রাখা হয় এবং এ হিসাবে জমাকৃত অর্থ অনুমোদিত খাত ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না।
নগদের ব্যাংক হিসাব পরিচালনায় ‘থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড’–এর নাম পরিবর্তন করে ‘নগদ লিমিটেড’ করা বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠিতে বলা হয়েছে, নগদের ই-মানি কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া নগদ লিমিটেডের নামে ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট হিসাব না খোলার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো। ফলে ডাক বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারবে না নগদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সেবাটি নাম পরিবর্তন করেছে। আমরা এটাকে ডাক অধিদপ্তরের সেবা হিসেবে জানি। এসব হিসাবে গ্রাহকের জমা টাকা থাকে। হিসাব খোলার আগে ডাক বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে।
গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ট্রাস্ট ফান্ড ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক নীতিমালা জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নীতিমালাটির নাম দিয়েছে ‘গাইডলাইনস ফর ট্রাস্ট ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ইন পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সার্ভিসেস’। প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকের জমা টাকার পুরোটাই ব্যাংকে ‘ট্রাস্ট ফান্ড’ হিসাবে জমা রাখতে হবে। ফলে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকের হিসাবে জমা টাকা নিজেদের প্রয়োজনে আর ব্যবহার করতে পারছে না।
নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করতে হবে। এ জন্য তফসিলি যেকোনো ব্যাংকে ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট হিসাব খুলতে হবে। এ হিসাবে গ্রাহকের জমা করা পুরো টাকা থাকতে হবে। এ টাকা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুমোদিত একটি অংশ সরকারি বিল-বন্ড, স্থায়ী আমানতে রাখা যাবে। এই বিনিয়োগ থেকে যে সুদ আসবে, তা প্রতিষ্ঠানগুলো দৈনন্দিন খরচ, সরকারি মাশুল, গ্রাহক সচেতনতা খাতে ব্যবহার করতে পারবে। এ সুদ আয় থেকে গ্রাহকদেরও ভাগ দিতে হবে। ট্রাস্ট ফান্ডের বিপরীতে কেউ সরাসরি ঋণ বা ঋণসুবিধা নিতে পারবে না।
প্রতিষ্ঠানগুলো এই নিয়ম অনুসরণ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। গ্রাহকের কষ্টার্জিত অর্থের সুরক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন নীতিমালা প্রতিটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে মেনে চলতে হবে।