মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৩ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ই-কমার্স কম্পানি সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের মালিক জুয়েল রানার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি হয়েছে রাজধানীর বনানী থানায়। বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে গতকাল রোববার।
‘নগদের’ জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী মামলাটি করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত করার পাশাপাশি আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে প্রতারণা করে ২৭ গ্রাহকের ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে আরেকটি মামলা হয়েছে।
গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে ভুক্তভোগীদের পক্ষে নাসিম প্রধান অভিযোগ দায়ের করেন। শুনানি শেষে আদালত গুলশান থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্যের দাম পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে ‘নগদ’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠানটি। ৩০ ও ৩১ আগস্টে ‘নগদের’ সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের কিছু হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন ধরা পড়ে। পরে দেখা যায়, কয়েকজন গ্রাহকের জন্য টাকা ফেরতের অনুরোধ পাঠিয়ে মোট ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৩ টাকা নেওয়া হয়।
বাদী তাঁর অভিযোগে বলেন, ‘নগদের’ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় এই লেনদেনগুলোর বিষয়ে কতগুলো সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। যেমন একই সঙ্গে অস্বাভাবিক মাত্রার টাকা ফেরতের অনুরোধ, একই পরিমাণ টাকার জন্য একই হিসাবে বারবার অনুরোধ ইত্যাদি। ১ সেপ্টেম্বর জুয়েল রানা ‘নগদ’ কার্যালয়ে এসে টাকা ফেরতের অনুরোধগুলো ‘ভুলবশত’ হয়েছে দাবি করে সমপরিমাণ টাকার চেক দেন। কিন্তু সেই চেক ব্যাংকে দিয়ে টাকা তোলা যায়নি। তারপর থেকে জুয়েল রানার সঙ্গে ‘নগদ’ আর যোগাযোগও করতে পারেনি।
নগদের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম সজল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু নম্বরে টাকাগুলো নিয়েছে। নগদ কর্তৃপক্ষ আটটি নম্বর শনাক্ত করেছে। তবে আরও কিছু নম্বরের অ্যাকাউন্টেও যেতে পারে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের মালিক জুয়েল রানার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
অস্বাভাবিক লেনদেন ও প্রতারণার অভিযোগের কারণে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রেখেছে। তার মধ্যে সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমও রয়েছে।
জানতে চাইলে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলছে। এজাহারভুক্ত আসামিকে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এদিকে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে আদালতে করা মামলার অন্য আসামিরা হলেন সোনিয়া মেহজাবিনের স্বামী মাসুকুর রহমান, শেখ সোহেল রানা, আমান উল্লাহ চৌধুরী, জায়েদুল ফিরোজ, নাজনীন নাহার বীথি ওরফে বীথি আক্তার ও নাজমুল হাসান রাসেল।
তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে তাঁরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য ই-অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে চমকপ্রদ অফার দেন। বিভিন্ন তারিখে বিভিন্ন পণ্য কেনার জন্য ২৭ জন ভুক্তভোগীর দেওয়া ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৭৯ টাকা নেওয়ার রসিদ দিলেও পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করে এবং সর্বশেষ মালিকানা হস্তান্তর হওয়ার দরুন সকল প্রকার পণ্য সরবরাহ স্থগিত করেন। এ ছাড়া অভিযুক্তরা আত্মগোপন করেন।
এর আগে ই-অরেঞ্জের সোনিয়া মেহজাবিনসহ সাত মালিকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারের পর চারজন এখন জেলহাজতে। সোনিয়ার ভাই সাময়িক বরখাস্তকৃত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা টাকা আত্মসাতের পর বিদেশে পালানোর সময় ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও দেশে মামলা হয়েছে।