করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেই সতর্ক করবে স্মার্টফোন। এমন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, হংকং, রাশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে এরই মধ্যে এটি চালু হয়েছে। লোকেশন ম্যাপ, কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোড ফিচার ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে এসব দেশের নাগরিক।
প্রযুক্তির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে সহায়ক এই অ্যাপ নিয়ে বাংলাদেশেও ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অ্যাপটি নিয়ে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা প্রায় দুই মাস ধরে কাজ করছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই অ্যাপ চালু করতে যাচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা ঘরে বসে করোনা পরীক্ষা, ভার্চুয়াল হাসপাতাল, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার মেসেঞ্জার, কভিড-১৯ ট্র্যাকারসহ নানা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছি। নাগরিকদের সুরক্ষায় কন্টাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ নিয়ে আমরা বেশ কিছু দিন থেকে কাজ করছিলাম। অবশেষে আমরা এটি চালু করতে পেরেছি। আগামীকাল (আজ) এর উদ্বোধন করা হবে।’
এই অ্যাপ কিভাবে কাজ করবে জানতে চাইলে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ ডাউনলোড করার পর স্মার্টফোনের লোকেশন এবং ব্লুটুথ অন রেখে বাড়ির বাইরে বের হলে এটি এক-দুই মিটারের মধ্যে যারা থাকবে তাদের হিস্ট্রিগুলো আমাদের ডাটাবেইসে পাঠাবে। কেউ যদি আক্রান্তের কাছাকাছি চলে যায় তাহলে সে স্মার্টফোনে অ্যালার্ট পাবে। তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা যদি কয়েক দিন পরও করোনা পজিডিভ হয় তাহলেও স্মার্টফোন থেকে সতর্কবার্তা পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে ফোন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেওয়া হবে।’
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা মনে করছি এটা যেহেতু একটি দীর্ঘায়িত সমস্যা, তাই কন্টাক্ট ট্রেসিং অ্যাপটি আমাদের সবাইকে ব্যবহার করতে হবে।’
জানা গেছে, এটি গুগল প্লেস্টোর থেকে যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ডাউনলোড করা যাবে। এই অ্যাপটি তৈরি করতে আইসিটি বিভাগের নেতৃত্বে পাঁচটি সংস্থা কাজ করেছে। তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ, এটুআই, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআর, প্রযুক্তি পার্টনার হিসেবে সহজ ডিজিটাল সল্যুশনস কাজ করেছে।
কন্টাক্ট ট্রেসিং কী?
কন্টাক্ট ট্রেসিং হচ্ছে একটি পদ্ধতি, যা সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষেত্রে যেসব মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছে তাদের স্বেচ্ছা আইসোলেশনে যেতে বলা হয়। এটা সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের ফোনের মাধ্যমে জানানো হয়।
সঙ্গে একটা স্বয়ংক্রিয় লোকেশন ট্র্যাকিং মোবাইল অ্যাপও সংযুক্ত করা হয়। করোনাভাইরাসে শনাক্ত কারো সংস্পর্শে এলে অ্যাপটি তার সময় ও স্থান তুলে ধরে সতর্কবার্তা পাঠাবে। ফোনের শুধু জিপিএস ডাটা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত রোগীদের ডাটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। তারপর নিয়মিত ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠানো হবে এবং শুধু ব্যবহারকারীকেই পাঠানো হবে।
করোনা ভাইরাসের মারাত্মক প্রাদুর্ভাবের শিকার দেশগুলোতে এরই মধ্যে কন্টাক্ট ট্রেসিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাপ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ও অবস্থানগত ডাটা তাদের ফোনেই সীমাবদ্ধ থাকবে, অন্য কেউ পাবে না। তাই ব্যক্তির অগোচরে অ্যাপের অপারেটর তাদের ওপর নজরদারি করতে পারবে না। করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসার বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে কি না তা নির্ধারণের পুরো স্বাধীনতা ব্যক্তির থাকবে।