রাজধানীসহ অন্তত দেশের ২৫ জেলায় এখন খামারে এবং শখ করে হরিণ পালন করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জে হরিণ পালনের প্রবণতা বেশি।
এসব এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার খামারি ও শৌখিন হরিণ পালকদের কাছে ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানা গত বছর ১৯৮টি চিত্রা হরিণ বিক্রি করেছে। এ থেকে চিড়িয়াখানা এক কোটি টাকার বেশি আয় করেছে।
এই চিড়িয়াখানায় এখন প্রায় ৪০০ হরিণ আছে। এ থেকে আরও শতাধিক হরিণ তারা বিক্রি করবে। খবর কালের কণ্ঠের।
আইন অনুযায়ী, ১০টির বেশি হরিণ পালন করলে তা খামার হিসেবে গণ্য হবে এবং এর জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তবে যে পর্যায়েই লালন-পালন করা হোক না কেন, হরিণের মাংস খাওয়া এখনো বৈধ নয়।
এক যুগ আগেও পার্ক কিংবা চিড়িয়াখানা ছাড়া শৌখিন ও খামার পর্যায়ে হরিণ পালনের কথা তেমন শোনা যায়নি। কিন্তু সরকারের বিধিমালা মেনে এখন অনেকে হরিণ পুষছেন। বাংলাদেশে পাঁচ প্রজাতির হরিণ আছে। এর মধ্যে মায়াবী চোখের কারণে চিত্রা হরিণ সবার মন কাড়ে।
ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এক জোড়া হরিণ প্রথমে এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। এখন জোড়া এক লাখ টাকায় বিক্রি করছে। গত বছর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কোটি টাকার ওপরে হরিণ বিক্রি করেছে।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মো. আব্দুল লতিফ বলেন, অনুকূল পরিবেশ, যত্ন আর ভালো ব্যবস্থাপনার কারণে চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার চেয়ে হরিণ বেশি হয়ে গেছে। তাই সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে আহগ্রীদের কাছে কিছু হরিণ বিক্রি করা হয়েছে।
আব্দুল লতিফ বলেন, যেহেতু চিড়িয়াখানা একটি প্রদর্শনীকেন্দ্র, কোনো খামার নয়, তাই হরিণ শুধু প্রজনন করলে তো হবে না। তাদের খাবার লাগবে, রাখার জায়গা লাগবে, যত্ন লাগবে। এর জন্য নির্দিষ্ট একটা বাজেট থাকে। এখন চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার বেশি হরিণ আছে। তাই দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানার সঙ্গে আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে প্রাণী বিনিময় করার প্রক্রিয়া চলছে।
এ ছাড়া রিসোর্ট মালিক, শিল্পপতি, খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে পালনের জন্যও হরিণ বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষ যেমন গৃহপালিত প্রাণী লালন-পালন করছে, তেমনি সামনে হরিণও পালন করা হবে। সেভাবেই সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে অবৈধভাবে হরিণ পোষার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। ২০০৯ সালে দেশে প্রথম বাসাবাড়ি ও খামারে হরিণ লালন-পালনের অনুমতি দিয়ে একটি নীতিমালা জারি করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর এসংক্রান্ত বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
খুলনা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল জানান, খুলনা থেকে এ অঞ্চলের ২১টি জেলায় শৌখিনভাবে হরিণ পালনের অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩২টি লাইসেন্সের অধীন ১৫টির বেশি জেলায় ১৬২টি হরিণ আছে। তিনি বলেন, ‘অনুমোদনপ্রাপ্তরা যাতে নিয়ম মেনে হরিণ পালন করেন, সে জন্য আমরা নিয়মিত তদারকি করি। বিভিন্ন কারণে লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ’
যা রয়েছে বিধিমালায়
খামার পর্যায়ে হরিণ লালন-পালন করতে নিজস্ব মালিকানায়, ভাড়া বা দীর্ঘমেয়াদি ইজারা মূল্যে জমি থাকতে হবে। বন বিভাগ আবেদনের ৩৭ দিনের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে হরিণ পালনে উপযুক্ত কি না সেই প্রতিবেদন দাখিল করে। সিটি করপোরেশন পর্যায়ে লাইসেন্স ফি ২০ হাজার টাকা এবং এর বাইরে ১০ হাজার টাকা। লাইসেন্সের প্রসেসিং ফি দুই হাজার টাকা। এক বছর মেয়াদি লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২৫ শতাংশ ফি দিয়ে নবায়ন করতে হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণের দুই মাসের মধ্যে নবায়নের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ এবং তিন মাসের মধ্যে করলে ফি ৮০ শতাংশ দিতে হয়।
একই সঙ্গে বছরে প্রতিটি হরিণের জন্য এক হাজার টাকা পজেশন ফি দিতে হয় বন বিভাগকে। লাইসেন্স পেয়ে এক মাসের মধ্যে পজেশন সার্টিফিকেট নিতে হবে। লাইসেন্স ও পজেশন সার্টিফিকেটের প্রতিলিপি ফি এক হাজার টাকা। তবে শৌখিন পর্যায়ের হরিণ পালনকারীদের লাইসেন্স নিতে হবে না। শুধু পজেশন সার্টিফিকেটের জন্য এক হাজার টাকা এবং প্রতিটি হরিণের জন্য বছরে এক হাজার টাকা পজেশন ফি দিতে হবে।
হরিণকে ছাগলের মতোই শেডের মধ্যে রাখা যায়। কেবল দানাদার খাবার, খনিজ লবণ ও সুপেয় পানির জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
২০০৯ সালের হরিণ লালন-পালন সংক্রান্ত নীতিমালায় চিত্রা হরিণ পূর্ণবয়স্ক হলে তার মাংস খাওয়ার অনুমতি ছিল। নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, হরিণের মাংস খাওয়া যাবে না। এই বিধিমালা লঙ্ঘন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।