বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করেছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (সিইউবি)।
রোববার সকালে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল কলিজিয়েট প্রোগ্রামিং কন্টেস্টের (আইসিপিসি) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বিল পাউচার। সভাপতিত্ব করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফ্যাকাল্টি মেম্বার সিআইডি মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান, আব্দুল মোনেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাঈনুদ্দিন মোনেম ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নির্বাহী চেয়ারম্যান শাহনুল হাসান খান।
আমেরিকান অধ্যাপক বিল পাউচার বলেন, ‘দুটি মহান দেশ ও জাতি ৫০ বছর ধরে একটি অনন্য সম্পর্কের ভিত রচনা করেছে। আমরা সামনে আরও ৫০ বছর পরে এই সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হব বলে আমি আশাবাদী।
বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে ৫০ বছর পর আপনারা কী করছেন সেটা দেখার জন্যে আমি থাকব না। তবে আমার বিশ্বাস নাগরিক হিসেবে আপনারা গোড়া থেকে যে বিশ্বটা তৈরি করবেন সেটা হবে অসাধারণ। আগে কখনই এত সুযোগ, জ্ঞানের ভাণ্ডার বা সম্পদ কোনো সমাজের আত্মার মূল শক্তি ছিল না।
সবাইকে নিজের শক্তির ওপর আস্থা রাখার অনুপ্রেরণা দেন অধ্যাপক পাউচার। তিনি বলেন, নিজেরা যা হতে পারবেন জীবনে সেটার জন্যই প্রস্তুত হোন। কারণ সেটাই শান্তির পথ। আর প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে নিজেকে জিজ্ঞাস করুন- আমি কি সুখী হতে চাই? এবং সে লক্ষ্যে কাজ করুন।
ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, বাংলাদেশ ও আমেরিকার বন্ধুত্বের ৫০ বছর উদযাপন করতে পেরে আমি আনন্দিত। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জনগণের মধ্যে অসংখ্য বন্ধন তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের উদারতা ও মানবিকতা বিশ্বের কাছে এক উদাহরণ। বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক দাতা যুক্তরাষ্ট্র। সংকটের টেকসই সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি আমেরিকার দূতাবাসের অন্যতম অগ্রাধিকার।
‘আমাদের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯ সালে দ্বিমুখী বাণিজ্য রেকর্ড ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্র এখনও বাংলাদেশি পণ্যের বৃহত্তম একক-দেশীয় রপ্তানি গন্তব্য এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বৃহত্তম উত্স। আমেরিকান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) আমদানির ফ্যাসিলিটি তৈরি করেছে। তারা দেশের খরস্রোতা নদীগুলো ড্রেজিংয়ে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি দিয়েছে এবং বর্তমানে ভ্রমণ ও বাণিজ্যের সুবিধার্থে বিশ্বমানের বিমান ও যানবাহন সরবরাহ করছে। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তন, শান্তিরক্ষা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ও আরও অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে একসঙ্গে কাজ করি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্ব প্রতি বছরই দৃঢ় ও গভীরতর হচ্ছে। ’
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করায় আইসিপিসির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বিল পাউচারকে ধন্যবাদ জানান ড. নাফিজ সরাফাত। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ-আমেরিকার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার হাত ধরে ভবিষ্যতে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
আলোচনায় শাহানুল হাসান খান বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এটি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি দেখলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলার ক্ষেত্রেও দেশটি বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে।
‘জাতিসংঘ শন্তিরক্ষা মিশনে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের গার্মেন্ট পণ্যের বড় বাজারও যুক্তরাষ্ট্র। তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, প্রযুক্তি সহায়তার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছে কেউ নেই। ফলে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রযুক্তবিদদের জন্যও সুফল বয়ে আনছে। ’
অনুষ্ঠানে আব্দুল মোনেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক বর্তমান সরকারের সময়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে। তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকারও প্রশংসা করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সিনিয়র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এইচ এম জহিরুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এস এম সিরাজুল হকসহ সব বিভাগের প্রধান ও শিক্ষকরার উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
পরে বিল পাউচার বাংলাদেশের অগ্রগতির ৫০ বছর উপলক্ষে সিইউবি আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। এ সময় ঐতিহাসিক ও সমকালীন ছবিগুলো সম্পর্কে তাকে বিভিন্ন তথ্য জানান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।