December 23, 2024, 6:39 am

দূরবীনে দূরের জানালা

Reporter Name
  • Update Time : Friday, June 12, 2020,
  • 438 Time View

অনলাইন ডেস্ক

জাপানের রাজধানী মহানগরী টোকিও হচ্ছে ৪০০ বছরের প্রাচীন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হচ্ছে ১২০০ বছরের প্রাচীন নগর। বস্তুত দুটো নগরীই মধ্যযুগে রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। বিগত ৪০০ বছরে টোকিও যেভাবে বিশ্বের সুপরিকল্পিত সুরম্য নগরীতে সজ্জিত হয়েছে তেমনটি আদৌ হয়নি ঢাকা। আজ এ দুটি মহানগরী স্বর্গ ও নরকের মতোই সুস্পষ্ট ব্যবধানজনিত অবস্থানে অবস্থিত।

মধ্যযুগে টোকিওর নাম ছিল এদো। এই এদোকে কেন্দ্র করে সমগ্র জাপানকে শাসন করত সামুরাই শাসক শোওগুন (জেনারেল) তোকুগাওয়া ইয়েয়াসু। এই তোকুগাওয়া রাজবংশ জাপানকে শাসন করে দীর্ঘ আড়াইশ বছরেরও বেশি সময় (১৬০৩-১৮৬৮)। ১৮৬৮ সালে জাপানে এক মহাসংস্কার সাধিত হয় যাকে বলা হয়ে থাকে ‘মেইজিইশিন’ বা ‘মেইজি রেস্টোরেশন।’ অর্থাৎ এই সালে সামুরাই যুগের অবসান ঘটে রাজতান্ত্রিক শাসনাধীনে সম্রাট মুৎসুহিতোর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে।

এই নতুন যুগের নামকরণ করা হয় ‘মেইজি জিদাই’ বা ‘মেইজি যুগ।’ রাজদানী এদোর নামও পরিবর্তিত হয়ে টোকিও (তোওকিয়োও) রাখা হয় যার অর্থ: পূর্বদেশীয় রাজধানী। শুরু হয় পাশ্চাত্যের আদলে ঐতিহ্যকে বজায় রেখে বা সমন্বয় ঘটিয়ে রাজধানী টোকিওর আধুনিকীকরণ।

এদো যুগ (১৬০৩-১৮৬৮), মেইজি যুগ (১৮৬৮-১৯১২) এবং তাইশো যুগ (১৯১২-২৬) এই তিন যুগে টোকিওর অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে। ১৯২৫ সালেই টোকিওতে পাতাল রেল চালু হয়ে যায়। স্থাপিত হয় টেলিফোন লাইন। শহরব্যাপী ট্রাম চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এই তিন আমলের অনেক স্থাপত্যকীর্তি এখনো এই মহানগরের অহঙ্কার। যদিওবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল টোকিও, পুনরায় তাকে গড়ে তুলেছে জাপানিরা অতি দ্রুত সময়ের ব্যবধানে। যে সকল প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সেগুলোকেও পুনঃসংস্কার করা হয়েছে যথার্থভাবে, যেগুলো এখন মহানগরী টোকিওর নিজস্ব পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রাজধানী হিসেবে একটি নগরের প্রাচীন ও পুরনো স্থাপত্যকীর্তিই হচ্ছে গর্বিত রুচিশীলতার প্রাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উজ্জ্বল উদাহরণ যা শহরকে আলাদা মর্যাদায় উদ্ভাসিত করে রাখে।
টোকিওস্থ তাইতো-ওয়ার্ডের ইউশিমা শহরে অবস্থিত ‘কিউ ইওয়াসাকি তেই তেইএন’ বা ‘প্রাক্তন ইওয়াসাকি বাগানবাড়ি’ হচ্ছে তেমনি একটি প্রাচীন নিদর্শন যা দেশি-বিদেশি পর্যটক ছাড়াও যারা নান্দনিক সৌন্দর্য খুঁজতে পছন্দ করেন তাদের জন্য একটি স্বর্গ।

ইওয়াসাকি বাগানবাড়িটি বর্তমানে ১৭,০০০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে অবস্থিত। যদিওবা মূল পরিকল্পনায় ছিল ২০টি ভবন নিয়ে ৪৯,৫০০ বর্গমিটার জায়গায় নির্মাণ করা। বর্তমানে এখানে রয়েছে পাশ্চাত্যশৈলীর একটি বহুকক্ষবিশিষ্ট দুতলা ভবন, সুইস-শৈলীতে নির্মিত বিলিয়ার্ড হাউস এবং একটি জাপানি আদলে নির্মিত গৃহ যেখানে ঐতিহ্যবাহী ‘চা-দোও’ বা ‘চা-অনুষ্ঠান’ হত নিয়মিত। এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে চা-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে বলে জানালেন জনৈক কর্মকর্তা।

প্রকৃতপক্ষে, এটি প্রথম দিকে ইওয়াসাকি বংশের সম্পদ ছিল না। এদো যুগের অভিজাত সামুরাই সাসাকিবারা বংশের সম্পত্তি ছিল। এরপর মেইজি যুগে এসে এই সম্পত্তি হস্তান্তরিত করা হয় মাইজুরু প্রদেশের অভিজাত মাকিনো পরিবারের কাছে। তাদের কাছ থেকে ১৮৯৬ সালে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হিসায়া ইওয়াসাকি ক্রয় করেন। তিনি ছিলেন জাপানের বর্তমানে জগৎবিখ্যাত এবং প্রভূত প্রভাবশালী মিৎসুবিশি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইয়াতারোও ইওয়াসাকির পুত্র এবং প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট।

হিসায়া এটি ক্রয় করেই পরিকল্পনা নেন একে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মিলনকেন্দ্ররূপে নির্মাণ করার। তিনি তৎকালীন বৃটেনের বিখ্যাত স্থপতি জোসিয়াহ্ কোনডোরকে নিযুক্ত করেন। জোসিয়াহ্ তখন মেইজি সরকারের আমন্ত্রণে জাপানে আসেন উপদেষ্টা হিসেবে। তিনি সরকারিভাবে বেশ কয়েকটি ভবনের নকশা করেন এর মধ্যে রোকুমেইকান ভবন, মিৎসুই ক্লাব, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যান্ড লিটারেরি ভবন, উয়েনো ইম্পেরিয়াল মিউজিয়াম বর্তমানে টোকিও জাদুঘর, সেইসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবন প্রভৃতি। এগুলো আজও তাঁর মহান র্কীতি হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে। এগুলো মহামূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পদ। স্থপতি জোসিয়াহ্কে বলা হয় জাপানের আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যার জনক।

উয়েনোসংলগ্ন শহর ইউশিমা জিনজা নামক শিন্তোও ধর্মীয় মন্দির থেকে পায়ে হেঁটে মিনিট দশেকের পথ ইওয়াসাকি বাগানবাড়ি। সপ্তাহের প্রতিটিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভীড় পরিলক্ষিত হয়। ৩০০ ইয়েনের টিকিট কিনে হালকা অজন্তা ও নীল রঙের ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করলেই নিমিষে শতবর্ষ পূর্বের পরিবেশে চলে যাওয়া যায়। ভবনটির কাঠের সিঁড়ি থেকে প্রতিটি কক্ষের লাল পুরো গালিচাসহ প্রতিটি প্রাচীন আসবাবপত্র এমনভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে যে গৃহস্বামী যেন এখনই এসে লাল ভেলভেটের গদিওয়ালা রাজকীয় চেয়ারে বসবেন!

গ্রান্ড পিয়ানোটি এখনো সেভাবেই সংরক্ষিত। কাচের আলমারিতে এখনো সাজানো আছে কত রকমের রুচিশীল জিনিসপত্র! এই ভবনটিতে পাশ্চাত্য এবং জাপানের ঐতিহ্য এমনভাবে সমন্বিত করা হয়েছে যে, অদ্ভুত এক ভালোলাগায় মন ভরে যায়। সামনের ও পেছনের সপরিসর বারান্দায় বিছানো আছে খড় দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী ‘তাতামি।’ কোনো কোনো দরজা ঐহিত্যগত শৈলীতে ওয়াশি কাগজের তৈরি যাকে বলা হয় ‘ফুসুমা’। তাতে নয়নাভিরাম চিত্র অঙ্কিত আছে।

শিল্পী হচ্ছেন মেইজি যুগের স্বনামখ্যাত ‘নিহোনগাকা’ বা ‘জাপানিশৈলীর চিত্রশিল্পী’ হাশিমোতো গাহোও। মনীষী, শিল্পাচার্য ওকাকুরা তেনশিনের অত্যন্ত প্রিয় শিষ্য। পুরো ভবনটিই কী অসাধারণ নকশাসম্বলিত তা সচক্ষে প্রত্যক্ষ না করলে ভাষায় ব্যাখ্যা করা কঠিন! বড় বড় মেদবহুল খিলান, সুউঁচু ছাদে রয়েছে টেরাকোটা নকশা। অনেকটা ইসলামি জ্যামিতিক আল্পনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ছাদ থেকে ঝুলন্ত ঝাড়বাতিগুলো জীবন্ত করে রেখেছে ঘরের ভাবগম্ভীর পরিবেশকে। পাশ্চাত্যশৈলীর টেবিল ও সোফাসেটগুলো সেই প্রাচীনত্ব নিয়ে দারুণ আভিজাত্য তুলে ধরছে।

১৯২৩ সালের মহাভূমিকম্পেও এই ভবনটির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। যেখানে টোকিও শহরের বহু ভবন বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। সকালের দিকে সংঘটিত সেই মারাত্মক ভূমিকম্পের সময় বহু মানুষ এই ভবনে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে জীবন রক্ষা করেছিলেন। তখন জাপানে আশ্রিত ভারত

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71