বৃদ্ধের পুরো নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আনছারী জান্নাতুল ফেরদৌস। বর্তমানে বয়স তার ১১৬। সেই ৭ বছরের কিশোর বয়স থেকে তিনি রমজানের রোজা রাখা শুরু করেছেন। যা টানা ১০৯ বছর ধরেই তিনি নিয়ম মেনে চালিয়ে যাচ্ছেন।
দীর্ঘ হায়াতপ্রাপ্ত এই বৃদ্ধ জীবনের ১১৬ বছর অতিবাহিত করলেও এখনও খালি চোখে কোরআন শরীফ তেলায়াত করে চলছেন। রাত ১২ টা থেকে গভীর রাতেও তিনি খালি চোখে অবিরাম কোরআন তেলাওয়াত করছেন।
শতবর্ষেরও অধিক বয়সী এই বৃদ্ধের জন্মস্থান কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার নাথের পেটুয়া বাতাসু বড়বাড়ী গ্রামে। বাবা মাওলানা আব্দুল মজিদ আনছারী ও মা ফাতেমা বেগম। ৩ বোন ৪ ভাইবোনের মধ্যে সৈয়দ মোহাম্মদ আনছারী জান্নাতুল ফেরদৌস সবার ছোট। মা, বাবা, ভাই, বোন সবাই পৃথিবী ছেড়ে কবরবাসী হলেও জান্নাতুল ফেরদৌস আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে আছেন। তিনি বর্তমান বসবাস করছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের ফুলসাগর সংলগ্ন চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে।
তিনি ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তানের জনক। এখানে তিনি তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন। তার ৫ সন্তানের মধ্যে শাহীন নামের এক ছেলে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার নাথের পেটুয়া বাতাসু বড়বাড়ী গ্রামে পৈত্তিক বসতবাড়িতে বসবাস করছেন।
জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসন আমলে বাবা মাওলানা আব্দুল মজিদ আনছারীর সঙ্গে জান্নাতুল ফেরদৌস কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে সফর করতেন। বাবা ধর্মীয় লাইনে শিক্ষিত হওয়ায় তিনি কুড়িগ্রামে ওয়াজ নছিয়ত করে বেড়াতেন। বাবার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। বাবার সঙ্গে সফরে এসে তিনি কুড়িগ্রামের মায়ায় জড়িয়ে যান। জান্নাতুল ফেরদৌস ধর্মীয় লাইনে লেখা পড়া শুরু করেন ভূরুঙ্গামারী উপজেলায়। লেখা পড়ার পর কুমিল্লা চলে গেলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার মায়ার টানে আবারো ছুটে আসেন কুড়িগ্রামে।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জান্নাতুল ফেরদৌস বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরআন শিক্ষা প্রদান করেন। অসংখ্য মানুষকে কোরআন শিক্ষা দেয়ায় তিনি ফেরদৌস ওস্তাদজি হিসেবে এলাকায় সম্মানিত হন। তাকে ‘ফেরদৌস হুজুর’ হিসেবে সবাই চেনে।
সব মিলে তিনি জীবনের ৮৫ থেকে ৯০ বছর পার করেছেন মোয়াজ্জিন ও কোরআন শিক্ষার পাঠদানে। এখন বয়সের ভারে নুব্জ ‘ফেরদৌস হুজুর’ আর মোয়াজ্জিন ও কোরআন শিক্ষার পাঠদানের কাজ করতে পাচ্ছেন না।
সৈয়দ মোহাম্মদ আনছারী এখন কাজের দায়িত্ব পালন করতে না পারলেও নিজের আমলের দায়িত্ব অটুট রেখেছেন। জীবনের ১১৬ বছরের জীবনে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত অব্যাহত রেখেছেন।
বৃদ্ধ সৈয়দ মোহাম্মদ আনছারী জান্নাতুল ফেরদৌস লেন, আমার বয়স চলছে ১১৬ বছর। আমার বয়স যখন ৭ বছর তখন থেকে প্রতিবছর রমজানের রোজা পালন করে যাচ্ছি। বর্তমানও রোজা পালন করছি। আমি যতদিন বেঁচে আছি রমজানের রোজা পালন করে যাবো। এখনও খালি চোখে কোরআন তেলায়াত করতে পারি। রাত ১২ টার পরও খালি চোখে কোরআন তেলাওয়াত করছি।
স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, আনছারী হুজুর ফুলবাড়ীর মায়ায় জড়িয়ে এখানে জীবনের দীর্ঘ সময়গুলো অতিবাহিত করছেন। তাকে আমরা যেমন আগে দেখছি তিনি এখনো যেন তেমন আছেন। ফেরদৌস হুজুর দীর্ঘ বয়সী মানুষ। তার পৈত্তিক নিবাস প্রভাবশালী ও পীর বংশের। একবার ফেরদৌস হুজুরকে তার পরিবারের লোকজন ফুলবাড়ী থেকে কুমিল্লায় নিয়ে যান। সেখান থেকে ফেরদৌস হুজুর পালিয়ে ফুলবাড়ীতে চলে আসেন।