পটুয়াখালী সদর উপজেলার ২ নং বদরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনিয়ার নেতৃত্বে, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা জেনারেল ম্যানেজার কে লাঞ্চিত করার অভিযোগ, সাব স্টেশনে তালা দেওয়ার হুমকি।
ইউনিয়ন পরিষদের বাৎসরিক কর আদায় সংক্রান্ত দাপ্তরিক বিরোধ নিয়ে পটুয়াখালী বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শাহ মোঃ রাজ্জাকুর রহমানকে লাঞ্ছিত ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে তালা দেওয়ার হুমকি অভিযোগ উঠেছে।
এসময় চেয়ারম্যান সোনিয়া আক্তার ইউনিয়ন পরিষদের কয়েজন সদস্য ও বহিরাগতদের নিয়ে জেনারেল ম্যানেজারের কক্ষে অবস্থান নেয়। সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, সকাল ১১ টা ৪৪ মিনিটে চেয়ারম্যান সোনিয়া ও তার দলবল নিয়ে জিএম’র কক্ষে প্রবেশ করে, ১২ টা ১৭ মিনিটে কক্ষ ত্যাগ করে।
পরে জেনারেল ম্যানেজার যেকোন বড় ধরনের অপ্রতিকার ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেনকে অবহিত করেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে প্রায় ৩৩ মিনিট পর চেয়ারম্যান সোনিয়া ও তার দলবল জিএম’র কক্ষ ত্যাগ করেন।
সোমবার (৫ জুলাই) সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, বদরপুর পল্লী বিদ্যুৎ এর সাবস্টেশনের ইউপি কর বাবদ বিগত ২৫ বছরের বকেয়া কর হিসেবে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের নিকট গতমাসের ১৮ মে বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনিয়া আক্তার স্বাক্ষরিত একটি পত্র পাঠান। পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ২ জুন পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হয়েছে।
তার কার্যালয়ে কোন অপ্রতিকার ঘটনা ঘটেছে কিনা, প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি কিছু পর দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করে উপরে চলে যাই। তারা প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি ছিলো। তবে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জবাবে আমাদের অফিসের নিয়ম অনুযায়ী করের অংক উল্লেখ করে দিয়েছি। তা পরিশোধ করতেও দাপ্তরিক নিয়মকানুন মেনে পরিশোধ করতে হবে। এবিষয় গুলো সে মানতে রাজি না হয়ে এরকম একটা ঘটনা ঘটিয়েছে।
কিন্তু তিনি চিঠির জবাব না পড়ে দাপ্তরিক নিয়মকানুন না মেনে তাৎক্ষণিক সমাধান ও কর পরিশোধের জন্য সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের কার্যালয়ে আসে। সমিতির পক্ষ থেকে তাকে চিঠি জবাব দেখানো হলে, সে উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গাল মন্দ করে এবং তাৎক্ষণিক করের টাকা দাবি করে। করের টাকা না দিলে সে সমিতির অফিসে তালা দেওয়া ও জিএমকে লাঞ্ছিত করে অফিস কক্ষে অবস্থান করে।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শাহ মোঃ রাজ্জাকুর রহমান স্বাধীন বাংলা টিভি কে বলেন, আমরা তার চিঠি পেয়ে সময় মত জবাব দিয়েছি। তিনি জবাব পড়ছেন কিনা জানিনা। কিন্তু সে তার দলবলসহ আমার কক্ষে আসে, আমাকে অশ্লীল ভাষায় গাল মন্দ করে এবং অফিসে তালা দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে জানাই। পরে তাদের হস্তক্ষেপে তিনি আমার কার্যালয় ত্যাগ করে।
এছাড়াও চেয়ারম্যান সোনিয়ার বিরুদ্ধে ইউপি সচিব মোঃ ওমর ফারুক কে মানসিক নির্যাতন, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও দাপ্তরিক কাজ থেকে বিরত রেখে অন্য বহিরাগত করিম নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে কাজ করান। এমন কি ইউনিয়ন পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোও তিনি করিমকে দিয়ে করান বলে অভিযোগ করেন সচিব।
তিনি আরও বলেন, বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদে আমার সম্মান নিয়ে চাকরি করা আর সম্ভব না। শত শত মানুষের মধ্যেও তিনি আমাকে গাল মন্দ করে। আমি এখন বদলী হতে চাই। ঐখানে আমি আর পারছি না।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসের ঘটনার বিষয় ইউপি সচিব বলেন, আমাকে চেয়ারম্যান কল করে অশ্লীল ভাষায় গাল মন্দ করে এক মিনিটের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আসতে বলে। আমি বলছি এত তারাতাড়ি আসতে পারবো না, পরে শুনছি ওখানে তিনি ঝামেলা করছেন।
এবিষয়ে বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনিয়া আক্তারের কাছে জানতে চাইলে, প্রথমে তিনি আমার সাংবাদিক দরকার নেই, এবিষয়ে কথা বলতে চাই না। পরে সিসি টিভি ফুটেজ ও অন্যদের বক্তব্য ও অভিযোগের কথা বললে, তিনি তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। আমি গিয়েছিলাম তার সাথে আলাপ করতে, তবে অস্বাভাবিক কোন ঘটনা ঘটেনি।