ইয়াওমে আরাফা তথা হজের দিন ইবাদত-বন্দেগির সঙ্গে সঙ্গে রোজা পালনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও মর্যাদা। তাই আরাফার দিন রোজা রাখা এবং তাসবিহ, তাহলিল, ইবাদত-বন্দেগি করা আবশ্যক।
আরাফার দিন হলো ইয়াওমুল আরাফা বা ৯ জিলহজ, যেদিন হাজিরা হজের প্রধান ফরজ অকুফে আরাফা বা আরাফা প্রান্তরে অবস্থান করে থাকেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বছরের মধ্যে এমন কোনো দিন নেই যে, আল্লাহ তাআলা আরাফার দিন অপেক্ষা বেশি সংখ্যায় তার বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
আর আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা বান্দার একেবারেই কাছাকাছি থাকেন। এরপর ফেরেশতাদের কাছে গৌরব প্রকাশ করে জানতে চান- আমার এ (রোজাদার) বান্দারা কী চায়? (মুসলিম)।
আরাফার ময়দানে অবস্থানরত হাজিদের ওপর অজস্র ধারায় রহমত বর্ষিত হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, বদরের যুদ্ধের দিন বাদে শয়তান সবচেয়ে বেশি অপদস্থ, ধিকৃত ও ক্রোধান্বিত হয় আরাফার দিনে। কেননা এ দিন শয়তান আল্লাহ পাকের অত্যধিক রহমত এবং বান্দার অগণিত পাপরাশি মাফ হতে দেখতে পায়। (মুয়াত্তা ও মিশকাত)।
আরাফার দিনটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত রহমতের। তাই এদিনে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। আরাফার দিনের আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. জিকির ও তাসবিহ পাঠ করা; ২. দোয়া করা।
রাসূল (সা.) বলেছেন, সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে আরাফার দিনের দোয়া; ৩. রোজা রাখা।
হজরত আবু কাতাদাহ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরাফার (হজের দিনের) রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আরাফার দিনের (হজের দিনের) রোজা পেছনের এক বছর এবং সামনের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে। আর তাকে আশুরার রোজার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে। ’ (মুসলিম ১১৬২, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নম্বর: ১২৫৮, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)।
আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘ইয়াওমে আরাফার (নয় জিলহজ) রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২; জামে তিরমিযী, হাদিস: ৭৪৯; সুনানে আবু দাউদ,হাদিস: ২৪২৫)।
সাহল বিন সা’দ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন রোজা রাখে তার উপর্যুপরি দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। ’(আবু য়্যা’লা, সহিহ তারগীব ৯৯৮ নং)।
উল্লেখ্য, হজের দিনকেই আরাফার দিন বলা হয়। চাঁদের হিসেবে ৮ জুলাই, শুক্রবার আরাফার দিন। যারা আরাফার দিনের রোজা রাখতে চান; তাদেরকে অবশ্যই বৃহস্পতিবার রাতে সেহরি খেতে হবে। এছাড়াও যেসব দেশে ১০ জুলাই কোরবানি হবে, তাদের অনেকে ৯ জুলাইও রোজা রাখেন।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আরাফার দিন রোজা রাখার পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আরাফার দিনের আগের ও পরের বছরের গুনাহ থেকে নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। সর্বোচ্চ প্রতিদান জান্নাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।