অনলাইন ডেস্ক
বেশ কিছু দিন থেকে উত্তেজনার পর হঠাৎ ভারত-চীনা সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ভারতের এক কর্নেল ও দুই সেনা জওয়ান নিহত হয়েছে। ৪৫ বছর পরে এই প্রথম চীনা সেনাবাহিনীর হামলায় ভারতীয় সেনা জওয়ান নিহত হলেন।
গতকাল (সোমবার) রাতে গালওয়ান উপত্যাকায় চীনা সেনার হামলায় ভারতীয় সেনা সদস্যরা নিহত হয়েছে।
গতকালই দু’দেশের সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছিল। এরপরেই ওই হামলার ঘটনা ঘটল।
আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গালওয়ান উপত্যকায় উত্তেজনা প্রশমন প্রক্রিয়া চলাকালীনই গতকাল রাতে সংঘর্ষ এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এতে ভারতীয় সেনার এক কর্মকর্তা এবং দুই জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। উভয়পক্ষের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৈঠক করছেন।’
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠক করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর। উপস্থিত ছিলেন তিন বাহিনীর প্রধান।
‘আজতক’ হিন্দি টিভি চ্যানেলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ওই ঘটনার পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রকাশ্যে এসেছে। বেইজিং ভারতের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ করেছে।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে উদ্ধৃত করে ‘আজতক’ জানিয়েছে, বেইজিং অভিযোগ করেছে যে ভারতীয় সেনারা সীমান্ত পেরিয়ে চীনা সেনাদের উপরে আক্রমণ করেছিল। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে এ রকম পরিস্থিতিতে ভারত যেন একতরফাভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ না করে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালে ভারত-চীন সীমান্তে সর্বশেষ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় অরুণাচল প্রদেশের নিয়ন্ত্রণরেখায় টহলরত ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেছিল চীনা বাহিনী। এরপরে ১৯৬৭ সালে নাথু লা-সীমান্তে উভয়পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল।
ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে গত মে মাসের শুরু থেকেই লাদাখ সীমান্তের কাছে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চীনা সেনারা ভারতের নির্ধারিত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা এলএসি পেরিয়ে প্যাংগং লেক গালওয়ান উপত্যকার নিকটে এসে পৌঁছয়। চীনের পক্ষ থেকে এখানে প্রায় পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়।
এর পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জামও জড়ো করা হয়। একইভাবে ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক বাহিনী মোতায়েন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে চলা ওই বিরোধের অবসান ঘটাতে উভয় দেশের সেনাবাহিনী কর্তৃক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। ৬ জুন থেকে সেনাবাহিনীর সিও থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্তর পর্যন্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকদফা আলোচনা চলছিল।
এরপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে দুই দেশের সেনাবাহিনী কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত পিছিয়ে যাবে। কিন্তু ওই প্রক্রিয়া চলাকালীন দু’দেশের সেনাদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ হল।