জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। তাই তিনি তার শেষ ভাষণে দুর্নীতি দমন জনগণকে সজাগ হতে বলতে গিয়ে বড় আফসোস করে বলেছিলেন – ‘…. এত চোরের চোর, এই চোর যে কোথা থেকে পয়দা হয়েছে তা জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে কিন্তু এই চোর তারা নিয়ে গেলে বাঁচতাম। এই চোর রেখে গেছে। কিছু দালাল গেছে, চোর গেলে বেঁচে যেতাম।’
দুঃখজনক হলো, দুর্নীতি মুক্ত সোনার বাংলার এ স্বপ্ন দ্রষ্টাকে হত্যা করে অংকুরে বিনাশ করেছে তার দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে। আর বহাল তবিয়তে দেশের মাটিতে বেঁচে আছে দুর্নীতিবাজ অন্যায়কারীরা। কালের প্রবাহে এসব দুর্নীতিবাজদের রাজনৈতিক, সামাজিক প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বাহিক্য রং বদল হয় কেবল। মুখোশের আড়ালে এদের একটাই পরিচয় ও নাম ‘দুর্নীতিবাজ।’
এরা জনগণের হক মেরে দিয়ে জনগণের সাথে অন্যায় করছে নানাভাবে দিনের পর দিন। তবে এদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ লড়াই করার সাহস পায় না। কারণ ক্ষমতা আর প্রভাবপত্তির কারণে তাদের কাছে জিম্মি ‘গণতান্ত্রিক’ শব্দটি। বর্তমান বাংলাদেশ অবকাঠামোগত ভাবে উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু এখনও মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো ন্যায্য ভাবে পূরণ হচ্ছে না। সামাজিক নিরাপত্তা পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে দুর্নীতির কারণে। যা করোনাকালে দৃশ্যমান।
মুখ বুজে সয়ে যাওয়া মানুষরা এখন এ দুর্নীতি মানতে নারাজ। তারা চায় একটা দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশে৷ তাই প্রতিবাদ করছে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে। তবে সাধারণ জনগণের চেয়ে দুর্নীতিবাজরা অনেক বেশি শক্তিশালী। এর অন্তরালের কারণ মানুষের কাছে কেবল প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির যথাযথ প্রয়োগ নেই। আর সে কারণে দুর্নীতিবাজরা জনগণের টাকা লুটপাট করতে সাহস পায়। দেশের টাকায় বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা দুর্নীতিবাজরা প্রতিবাদকারীদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। তবে তাদের এ উদ্যত দেখে মনে হয়, এ কি আমাদের সোনার বাংলার ছবি? নাকি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা অন্যায়। রাষ্ট্রযন্ত্র মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য নয়। জনগণের সার্বিক জীবন ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করা সরকারের মূল দায়িত্ব। যা করতে আওয়ামী সরকার সদা সচেষ্ট।
কিন্তু এর মাঝেও কোভিড-১৯ বাংলাদেশের এক ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অনিয়মে ত্রাণ হচ্ছে নয় ছয়। মানুষের মৃত্যু ভয় আর অনাগত অন্ধকার ভবিষ্যৎকে বিশ্লেষণ করলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে উপায়ন্তে। হয়তো এখন প্রতিবাদের ধরন পাল্টে গেছে।
ডিজিটাল যুগ বলে নিজের লেখনীতে প্রকাশ হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ। সেখানে সমাজের বুদ্ধিজীবীরা জনগণ ও সরকারের মঙ্গল প্রত্যাশা করে সামাজিক ও গণমাধ্যমে দুর্নীতি অভিযোগ তুলে ধরছে। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ‘কাফনের কাপড়ে পকেট নাই।’
অথচ তার সরকার আমলে সাংবাদিকরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরলে রোষানলে পড়তে হচ্ছে। এটা বাক স্বাধীনতাকে স্তদ্ধ করে দেয়। জনগণ আতঙ্কিত হয়। অন্যায়কে মুখ বন্ধ করে মেনে নিয়ে ভালো থাকার অভিনয় করাও অন্যায়। কারণ এটা দেশের প্রকৃত চিত্র নয়।
করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ একটা নতুন জীবন পাবার স্বপ্ন দেখছিল। তবে সে প্রত্যাশাটা দিবাস্বপ্নতে পরিণত হচ্ছে ক্রমশ। কারণে কোভিড-১৯ মানুষের কুরিপুকে ধবংস করতে পারছে না। নিজের দুর্নীতিবাজ মানসিকতার পরিবর্তন আনতে পারিনি। আর সে কারণে সাংবাদিক নঈম নিজাম, পীর হাবিবের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলাম ধরাকে রুদ্ধ করতে চায়।
যদি আইন অনুযায়ী কারও ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন করাটা বাহুল্যমাত্র। তবে কোন প্রেক্ষিতে ঘটনা ঘটছে তা উপলদ্ধি করার ক্ষমতা জনগণের আছে। সুতরাং সকলের মনে রাখা উচিত – ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তবে ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।’