ডলার সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। খরচ কমানোর নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও দেশের ডলার নিয়ে সংকট কাটছে না। ব্যাংকগুলোতে ডলারের ঘাটতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোনো কোনো ব্যাংক থেকে এলসি খোলা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বড় কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও ছোট ব্যাংক বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। এদিকে খোলাবাজারে আরও দাম বেড়েছে ডলারের। প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এমন সংকটের কারণে এলসি খোলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।ডলার সংকটের কারণে সরকার আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে খরচ কমানো উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলাসী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে এক শ ভাগ মার্জিন রেখে এলসি খোলার নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান কয়েক দফা কমানো হয়েছে। তবে এসব উদ্যোগে কোনো কাজ হয়নি। ডলারের দাম এখন প্রতিদিন বাড়ছে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে ডলারের দর ৬ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের দাম ঈদের আগে ও পরে ৯৮ থেকে ৯৯ টাকায় বেচাকেনা চলছিল। কিন্তু এখন সেটি বেড়ে ১০৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে। গতকাল বিভিন্ন ডলার কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানে এই দরে বিক্রি হয়েছে। আন্তব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে ১০২ থেকে ১০৩ টাকায় ডলার বিক্রি হতে দেখা গেছে।বিভিন্ন সূত্রে তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ করছে। বিভিন্ন ব্যাংকের চাহিদা বিবেচনায় স্বল্প আকারে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চাহিদার তুলনায় যে ডলার সরবরাহ করা হয়, তা খুবই কম। ফলে ব্যাংকগুলোকে খোলাবাজার থেকে উচ্চ দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। এদিকে ডলারের সংকটে থাকা দেশের একাধিক ব্যাংকের পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছেন না। যেখানে বিলাসী দ্রব্যের এলসির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসিই খুলতে পারছেন না। এমনকি শিল্পের কাঁচামাল, চিকিৎসা সামগ্রী আমদানির জন্যও এলসি খোলা যাচ্ছে না। এলসি খুলতে গেলে ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, বাজার থেকে ডলার কিনে এনে মার্জিনের অর্থ পরিশোধ করতে। এতে বেশি দামে যেমন ডলার কিনতে হচ্ছে, তেমনি আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ। এলসি খুলতে বিপাকে পড়ায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম।গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মূল্য অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দাম ৯৪ টাকার মধ্যে থাকলেও অনেক ব্যাংক এখন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলারের দাম ১০২ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিল্পের কাঁচামাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। যার দায় ভোক্তা সাধারণকেই বহন করতে হবে। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে। এ ধারা চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক এডি ব্যাংকগুলোর জন্য ডলার বিনিময়ে একই হার নির্ধারণ করে দিলেও অনেক ব্যাংক সেই নির্দেশনা প্রতিপালন করছে না। তাদের ইচ্ছামতো দর আদায় করছে। এ অবস্থা উত্তরণে ব্যাংকগুলোর ডলার বিনিময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ের আওতায় আনা প্রয়োজন। জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডলার নিয়ে এখন খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন সরবরাহ করছে। সেটি চাহিদার তুলনায় কম। ফলে আমাদের ভিন্ন উৎস থেকে ডলার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাতে দাম যেমন বেশি দিতে হচ্ছে, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। টাকার মান কমানো হয়েছে কয়েক দফা। এক্ষেত্রে বাজার বুঝে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো পথ নেই। পরিস্থিতি এখন খুবই কঠিন।