রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যার ঘটনায় আরও চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। টিপুর হত্যার প্রধান সমন্বয়কারী সুমন শিকদার ওরফে কিলার মুসার দেওয়া তথ্যে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার রাতে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-জুবের আলম খান রবিন, আরিফুর রহমান সোহেল (ঘাতক সোহেল), খায়রুল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুরের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান টিটু।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মতিঝিলের প্রগতি সংঘের উপদেষ্টা ছিলেন প্রয়াত যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী। এই সংঘ ঘিরেই মিল্কীর সঙ্গে রবিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড নামের বিপণিবিতানের সামনে গুলিতে নিহত হন যুবলীগ নেতা মিল্কী। আবার মিল্কী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন জাহিদুল ইসলাম টিপু। অন্যদিকে গ্রেফতার মাহবুবুর রহমান টিটু কাউন্সিলর মনসুরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসাবে মতিঝিল এলাকায় পরিচিত। তিনি মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
এলাকায় অনেকে তাকে মনসুরের ‘পিএস’ হিসাবেও ডেকে থাকেন। টিপু হত্যার মিশনে অর্থ সরবরাহসহ সংশ্লিষ্ট কাজে পরোক্ষভাবে তার সম্পৃক্ততার কথা বিভিন্ন সময় টিপুর ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে উঠে আসে।
আর ঘাতক সোহেল মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক। সর্বশেষ রাত ১১টার দিকে মতিঝিলের আরামবাগ থেকে গ্রেফতার হওয়া খায়রুল সোহেলের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
টিটুর বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর বলেন, টিটু একসময় মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল, ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম বলেন, টিপু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ইতঃপূর্বে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিন, টিটু ও ঘাতক সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখনই তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে এটুকু বলতে পারি, এ ঘটনায় যে পর্যায়ের যারাই জড়িত থাকুক, আমরা কাউকেই ছাড় দেব না। সবাইকে আইনের আওতায় আসতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় সড়কে প্রকাশ্য গুলি করে খুন করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা টিপু ও কলেজছাত্রী প্রীতিকে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। পেশাদার কিলার বাহিনী এক থেকে দেড় মিনিটের
অপারেশন শেষে পালিয়ে যায়। ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে টিপুর দিকে। এর মধ্যে তার শরীরে সাত রাউন্ড গুলি লাগে। সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলে সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি (২২) নামের এক নিরীহ কলেজছাত্রী নিহত হন।