জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশজুড়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পেট্রোল পাম্পগুলোতে তেল সংকট, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, গণপরিবহনের না পাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে রাজধানীর সড়কগুলোতেও। গণপরিবহন প্রায় নেই বললেই চলে।
পরিবহনের অপেক্ষায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। শহরের রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা নগণ্য থাকায় অফিসগামী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
গতকাল রাতে সরকারি এ সিদ্ধান্তের পরপরই ঝিনাইদহ জেলার পেট্রোল পাম্প গুলোতে মোটরবাইক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ ট্রাক ও বাসের দীর্ঘ সারি দেখতে পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে পাম্প মালিক ১১ টার পর থেকে পাম্পগুলো বন্ধ করে দেয়। আজ সকালে বিভিন্ন পাম্প ঘুরে দেখা গেছে উপচে সেই পড়া ভীড় আর নেই।
মূল্য বৃদ্ধিতে স্থানীয়ভাবে চলা বাসগুলোর উপস্থিতি রাস্তায় খুব কম দেখা গেছে। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা তাদের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে ঢাকাগামী বাসগুলোতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে।
একই চিত্র ছিলো মাদারীপুরেও। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মাদারীপুরের পেট্রোল পাম্পগুলোতে ছিলো মোটরবাইকের উপচে পড়া ভিড়। প্রথমে ২০০ টাকার করে পেট্রোল, অকটেন দিলেও পরবর্তীতে মোটরসাইকেলের চাপে ১০০ টাকার করে তেল দেয় পেট্রোল পাম্পেগুলো।
তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে সাভারের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে পরিবহনের স্টাফ ও বাইক চালকদের সঙ্গে পাম্প কতৃপক্ষের হট্টগোল ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। একটি পাম্পে তেল না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে দাবি পাম্প কতৃপক্ষের।
সরকার জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর পর এবার ভাড়া বাড়িয়েছে আন্তঃজেলাসহ দেশের বেশিরভাগ বাস অপারেটররা। এই সংকটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এমনকি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং রিকশা (প্যাডেল এবং ব্যাটারি উভয়ই) চালকরাও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।
কয়েকটি রুটে পরিবহন ভাড়া ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এছাড়া অনেক বাসের মালিক ও চালকরা তাদের কার্যক্রম আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পরিকল্পনা করছে।
মুন্সীগঞ্জে শনিবার সকাল থেকে দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে যাওয়ায় বেড়েছে যাত্রীদের দুর্ভোগ।
মুক্তারপুর সেতু দিয়ে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাগুলোকে অন্তত ১০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
ঢাকা থেকে আসা যাত্রী মিঠুন সাহা বলেন, ‘শুক্রবার সিএনজিতে ৫০ টাকা দিয়ে মুক্তারপুর ব্রিজ থেকে নারায়ণগঞ্জ গিয়েছিলাম। আজ আমার কাছ থেকে ৬০ টাকা নেওয়া হয়েছে। রাতারাতি ভাড়া বেড়েছে ১০ টাকা। ‘
খুলনায় আন্তঃনগর বাসের ভাড়া প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা-পাইকগাছা রুটের ভাড়া ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামে পরিবহন মালিকদের ধর্মঘটে শনিবার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হাজার হাজার যাত্রী পড়েছেন দুর্ভোগে।
শুক্রবার মধ্যরাতে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন।
অন্যদিকে বরিশালে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আজকের মধ্যে ভাড়া না বাড়ানো হলে ধর্মঘটে যাবেন পরিবহন মালিকরা।
পাবনায় পাবনা-ঢাকা রুটের বাসের ভাড়া গতকাল থেকে বেড়েছে ১০০ টাকা।
মৌলভীবাজার-ঢাকা রুটে বাসের ভাড়া আজ সকালে ৪৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হয়েছে।
এদিকে লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী ও সিলেটে বাস ভাড়া এখনো বাড়েনি। কিন্তু সড়কে যানবাহনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে রাঙামাটিতে বাস ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালকরা। শনিবার সকালে হঠাৎ গাড়ি শূন্য হয়ে যায় রাঙামাটি। এতে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়ে যাত্রী ও সাধারণ মানুষরা। কোন ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ পরিবহণ চলাচল বন্ধ হওয়াতে সড়কে সড়কে আটকা পড়ে সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয়, ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে যাত্রীদেরও রাস্তায় নামিয়ে বিক্ষোভ করে চালকরা।
পরিবহন মালিকরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এবং নতুন, বর্ধিত ভাড়া ঠিক করতে শিগগিরই বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।