আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে পরকালের শষ্যক্ষেত্র হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। যারা এ দুনিয়ায় তাঁর দেখানো পথে চলবে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ মতে জীবন পরিচালনা করবে তারাই সফলকাম। তারাই জান্নাত লাভ করবেন। জান্নাতে সর্বপ্রথম প্রবেশকারী হিসেবে মর্যাদা লাভের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমরা সবার শেষ (প্রেরিত) হয়েও কিয়ামতের দিন সবার প্রথম (জান্নাতবাসী) হব। আমরা সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করব। (বুখারি, মুসলিম)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহর, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতে পবিত্র বাসগৃহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহাসফলতা। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭২)
মহানবী (সা.)-এর কিছু হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, বেহেশতে বাজার থাকবে। তবে সেই বাজারে চাল, ডাল, তেল, আটা, ডিম, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি বিক্রি হবে না। সেই বাজার হবে একদম ভিন্ন। সেখানে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই, কারণ সেখানে বেহেশতবাসীদের যে পণ্য পছন্দ হবে, সে তাৎক্ষণিক ওই জিনিসের মালিক হয়ে যাবে, কোনো বেচাকেনার নিয়ম থাকবে না। সেখানে গেলে মানুষের পোশাক ও শারীরিক সৌন্দর্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যাবে।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমায় জান্নাতি লোকেরা এতে একত্রিত হবে। তারপর উত্তর দিকের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধুলাবালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং শরীরের রং আরো বেড়ে যাবে। তারপর তারা স্ব স্ব পরিবারের কাছে ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদের শরীরের রং এবং সৌন্দর্যও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর
তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহ শপথ! তোমাদের শরীরের সৌন্দর্য তোমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর বহুগুণে বেড়ে গেছে। (মুসলিম, হাদিস : ৭০৩৮)
কোনো কোনো বর্ণনা মতে, সেই বাজারে বেহেশতের বাসিন্দারা মহান আল্লাহর দিদার লাভ করবে। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, আমি আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাকে ও তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্র করেন। সাঈদ (রহ.) প্রশ্ন করেন, জান্নাতে কি বাজারও আছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে জানিয়েছেন যে, জান্নাতিরা জান্নাতে গিয়ে নিজ নিজ আমলের পরিমাণ ও মর্যাদা অনুযায়ী সেখানে জায়গা (মর্যাদা) পাবে। তারপর দুনিয়ার সময় অনুসারে জুমার দিন তাদের (তাদের রবের দর্শনের)
অনুমতি দেওয়া হবে এবং তারা তাদের রবকে দেখতে আসবে। তাদের জন্য তাঁর আরশ প্রকাশিত হবে।
জান্নাতের কোনো এক বাগানে তাদের সামনে তাদের প্রভুর প্রকাশ ঘটবে। তাদের জন্য নূর, মণিমুক্তা, পদ্মরাগ মণি, যমরূদ ও সোনা-রুপা ইত্যাদির মিম্বারসমূহ রাখা হবে। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতিও মিশক ও কর্পূরের স্তূপের ওপর আসন গ্রহণ করবে। তবে সেখানে কেউ হীন-নীচ হবে না। মিম্বারে আসীন ব্যক্তিদের তারা তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বা উত্কৃষ্ট ভাববে না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সূর্য বা পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে তোমাদের কি কোনো সন্দেহ হয়? আমরা বললাম, না। তিনি বলেন, ঠিক সে রকম তোমাদের রবের দেখাতেও কোনো সন্দেহ থাকবে না। আর সে মজলিসের প্রত্যেক লোক আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কথা বলবে। এমনকি তিনি একে একে তাদের নাম ধরে ডেকে বলবেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! অমুক দিন তুমি এমন কথা বলেছিলে, মনে আছে কি? এভাবে তিনি তাকে দুনিয়ার কিছু নাফরমানি ও বিদ্রোহের কথা মনে করিয়ে দেবেন। লোকটি তখন বলবে, হে আমার রব! আপনি কি আমাকে মাফ করেননি? তিনি বলবেন, হ্যাঁ, আমার ক্ষমার বদৌলতেই তুমি
এ জায়গাতে পৌঁছেছ। এই অবস্থায় হঠাৎ তাদের ওপর একখণ্ড মেঘ এসে তাদের ছেয়ে ফেলবে এবং তা হতে তাদের ওপর সুগন্ধি (বৃষ্টি) বর্ষিত হবে, যেরূপ সুগন্ধ তারা ইতিপূর্বে কখনো কিছুতে পায়নি। আমাদের রব বলবেন, ওঠো! আমি তোমাদের সম্মানে যে মেহমানদারি প্রস্তুত করেছি সেদিকে অগ্রসর হও এবং যা কিছু পছন্দ হয় তা গ্রহণ করো। তখন আমরা একটি বাজারে এসে হাজির হব, যা ফেরেশতারা ঘিরে রাখবেন। সেখানে এরূপ পণ্যসামগ্রী থাকবে, যা না কোনো চোখ দেখেছে, না কোনো কান শুনেছে এবং না কখনো অন্তরের কল্পনায় ভেসেছে। আমরা সেখানে যা চাইব, তা-ই তুলে দেওয়া হবে। তবে বেচাকেনা হবে না। আর সে বাজারেই জান্নাতিরা একে অন্যের সঙ্গে দেখা করবে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতি সামনে এগিয়ে তার চেয়ে অল্প মর্যাদাবান জান্নাতির সঙ্গে দেখা করবে। তবে সেখানে তাদের মধ্যে উঁচু-নিচু বলতে কিছু থাকবে না। তিনি তার পোশাক দেখে অস্থির হয়ে যাবেন। এ কথা শেষ হতে না হতেই তিনি মনে করতে থাকবেন যে, তার গায়ে আগের চেয়ে উত্তম পোশাক দেখা যাচ্ছে। আর এরূপ এ জন্যই হবে যে, সেখানে কারো দুঃখ-কষ্ট বা দুশ্চিন্তা স্পর্শ করবে না। তারপর আমরা নিজেদের স্থানে ফিরে আসব এবং নিজ নিজ স্ত্রীদের দেখা পাব। তারা তখন বলবে, মারহাবা, স্বাগত! কী ব্যাপার! যে রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলে, তার চেয়ে উত্তম সৌন্দর্য নিয়ে ফিরে এসেছ। আমরা বলব, আজ আমরা আমাদের আল্লাহ তাআলার সঙ্গে মজলিসে বসেছিলাম। কাজেই এ পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। আর এটাই ছিল স্বাভাবিক। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৪৯)