এশিয়া কাপ শুরুর আগে কেউ হিসাবের খাতাতেই রাখেনি শ্রীলঙ্কাকে। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচের পর তো সে ভাবনা আরও জোরাল হয়। কেননা টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে রীতিমতো উড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
সেই দলটাই কিনা জিতেছে এবারের এশিয়া কাপের শিরোপা।
রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে এক রূপকথার জন্মই দিয়েছে দাসুন শানাকার দল। শিরোপা জয়ের পর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের উদযাপনই বলে দিচ্ছিল সে কথা।
অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় বসছে টি২০ বিশ্বকাপ। যেখানে শ্রীলঙ্কা খেলতে পারবে না সরাসরি। বাছাইপর্ব পেরিয়ে তবে যদি মূল পর্বে জায়গা পায় দলটি! সেই তারাই কি-না এখন এশিয়ার রাজা! ভাবতে অবাক লাগলেও, এটাই এখন সত্যি।
শ্রীলঙ্কার গণমানুষের জন্য এই এশিয়া কাপ বিশাল এক আনন্দের উপলক্ষই বয়ে এনেছে। কেননা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে দেশটির প্রায় সকলেই ভুক্তভোগী। দুরাবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এর মধ্যে, এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়ার আনন্দ। দুঃসময়ে সেই উপলক্ষটা এনে দিতে পেরেই এখন বড্ড খুশি শানাকারা।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক শানাকা সবার আগে স্মরণ করেছেন দেশের মানুষজনকেই। সকলে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আমাদের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা আমাদের দারুণ সমর্থন দিয়েছেন। দেশের মানুষকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আশা করি, আমরা তাদের গর্বিত করতে পেরেছি। ’
দুবাইয়ে কাল ফাইনালের টস হতেই অনেকে পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে দিয়েছিল। কারণ, ফাইনালের আগে ১২টি ম্যাচের মধ্যে আগে ব্যাটিং করে জেতার ঘটনা ছিল মাত্র তিনটি। এর মধ্যে দুটি আবার পুঁচকে হংকংয়ের বিপক্ষে। অতীত ইতিহাস বের করেই পাকিস্তানকে সবাই জিতিয়ে দিচ্ছিল শিরোপা।
এরপর ব্যাট হাতে শ্রীলঙ্কার শুরুটাও ভালো হয়নি। তবে মাত্র ৫৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা। ভানুকা রাজাপাকসের ৭১ রানের ওপর ভর করে স্কোরবোর্ডে তোলে ১৭০ রান। তবে রান আরও কম হলেও নাকি লড়াই করতে পারত লঙ্কানরা। মতটা ফাইনাল জয়ের নায়ক রাজাপাকসেরই।
তিনি বলছিলেন, ‘পানি পানের বিরতির সময় যখন ক্রিস (শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউড) যখন কথা বলতে এল, আমি বললাম, দেখে ১৪০ রানের উইকেট মনে হচ্ছে। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করায় ওদের লক্ষ্যটা আরও বড় হয়ে গেল। ’
এর জন্য অবশ্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব রাজাপক্ষেই পাবেন। ৪৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৭১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন। ইনিংসের শেষ বলে নাসিম শাহকে মেরেছেন দারুণ এক ছক্কা। অধিনায়ক দাসুন শানাকা তো বললেনই, ‘ওই ছক্কাটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমাদের মোমেন্টাম এনে দিয়েছে। আর ১৭০ রান সব সময়ই খুব জটিল স্কোর। ’
এশিয়া কাপ জয়ে মানসিকভাবে বেশ এগিয়ে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আত্মবিশ্বাস যেন টইটুম্বুর করছে। আর সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এখন বিশ্বকাপেও দারুণ কিছু করার প্রত্যাশা আরেক লঙ্কান ক্রিকেটার চামিকা করুনারত্নের, ‘সাত বছর পর (২০১৪ সালের পর) জিতলাম আমরা। বছর দেড়েক আগেও আমরা কোথাও খুঁজে পাওয়ার মতো দল ছিলাম না, এখন আমরা ভিন্ন এক দল, তারুণ্যে ঠাসা। ’