বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) পাশাপাশি ই-পাসপোর্টের আবেদনও অনলাইনে করা যায়। ঘরে বসে সঠিক নিয়মে তথ্য পূরণ করে আবেদন করার পর নির্দিষ্ট পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে ছবি তোলার পাশাপাশি আঙুলের ছাপ দিতে হবে। ফলে বারবার পাসপোর্ট কার্যালয়ে যাওয়ার কষ্ট করতে হবে না।
এমআরপির আবেদন যেভাবে
মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্য ঠিকানার ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
এখানে বাংলা ও ইংরেজিতে কিছু নিয়ম লেখা রয়েছে, যা ভালোভাবে পড়ে পৃষ্ঠার নিচের দিকে থাকা সম্মতি বক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে কন্টিনিউ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ফরমে প্রয়োজনীয় সব তথ্য ধাপে ধাপে পূরণ করতে হবে। ফিয়ের বিষয়েও সেখানে উল্লেখ আছে। ফরমটি অনলাইনে জমা দিলে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে যে পাসপোর্ট কার্যালয়ের জন্য আবেদন করা হয়েছে, সেখানে গিয়ে ছবি তোলার পাশাপাশি আঙুলের ছাপ দিতে হবে।
ই-পাসপোর্টের আবেদন যেভাবে
ই-পাসপোর্টের জন্য ঠিকানার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ফরমে প্রয়োজনীয় সব তথ্য ধাপে ধাপে পূরণ করতে হবে। ফরম অনলাইনে জমা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য জমা দিতে হবে। তাই আবেদনের আগে অবশ্যই আপনার কাছাকাছি পাসপোর্ট কার্যালয়ে ই-পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হয় কি না, তা ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে হবে।
ফি সংক্রান্ত তথ্য
পাসপোর্ট ফি অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। অনলাইন পেমেন্ট ছাড়াও ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যাবে। সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট দেওয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত চালু করা অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি হলো স্টারকার্ড, ভিসা, কিউ-ক্যাশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিকাশ ও ডিবিবিএল নেক্সাস। অনলাইনে পেমেন্ট করার জন্য আপনার ব্রাউজারের পপ-আপ ব্লকার অক্ষম করতে হবে।
ই-পাসপোর্টের ফি
৫ বছর মেয়াদি ২১ দিনের নিয়মিত সরবরাহ ৪ হাজার ২৫ টাকা, ১০ দিনের দ্রুত সরবরাহ ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, ২ দিনে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা। ৪৮ পৃষ্ঠা ১০ বছর মেয়াদি ২১ দিন ডেলিভারি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ১০ দিনের ডেলিভারি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও ২ দিনের ডেলিভারি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। ৬৪ পৃষ্ঠা ৫ বছর মেয়াদি ২১ দিনের ডেলিভারি ৬ হাজার ৩২৫, ১০ দিনের ডেলিভারি ৮ হাজার ৬২৫, ২ দিনের ডেলিভারি ১২ হাজার ৭৫ টাকা, ৬৪ পৃষ্ঠা ১০ বছর মেয়াদি ২১ দিনের ডেলিভারি ৮ হাজার ৫০, ১০ দিনের ডেলিভারি ১০ হাজার ৩৫০, ২ দিনের ডেলিভারি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।
এমআরপি পাসপোর্ট ফি
৪৮ পাতার পাসপোর্ট এবং ৫ বছরের মেয়াদ, সাধারণ ডেলিভারি, ২১ দিন, ফি ৪০২৫ টাকা। এক্সপ্রেস ডেলিভারি, ১০ দিন, ফি ৬৩২৫ টাকা। সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি, ২ দিনে ৮৬২৫ টাকা। ৪৮ পাতার পাসপোর্ট এবং দশ বছরের মেয়াদ। সাধারণ ডেলিভারি, ২১ দিন, ফি ৫৭৫০ টাকা। এক্সপ্রেস ডেলিভারি, দশ দিন, ৮০৫০ টাকা। সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি, ২ দিন, ১০৩৫০ টাকা
৬৪ পাতার পাসপোর্ট এবং ৫ বছরের মেয়াদ । সাধারণ ডেলিভারি, ২১ দিন, ফি ৬৩২৫ টাকা। এক্সপ্রেস ডেলিভারি, ১০ দিন, ফি ৮৬২৫ টাকা। সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি, ২ দিন, ফি ১২০৭৫ টাকা ৬৪ পাতার পাসপোর্ট এবং ১০ বছরের মেয়াদ। সাধারণ ডেলিভারি, ২১ দিন, ফি ৮০৫০ টাকা। এক্সপ্রেস ডেলিভারি, ১০ দিন, ফি ১০৩৫০ টাকা। সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি, ২ দিন, ১৩৮০০ টাকা।
নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন ফরম জমা দিন
ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পর সাক্ষাতের প্রস্তুতি বা আবেদন ফরমটি আঞ্চলিক অফিসে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এজন্য আপনাকে আবেদন ফরমে উল্লেখিত নির্ধারিত তারিখে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। এসময় আবেদন ফরমটির সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ সঙ্গে রাখতে হবে। আপনার পেশার পরিচয়পত্রটিও রাখুন। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত কাউন্টারে আবেদনপত্রটি জমা দিতে হবে।
ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক
ই-পাসপোর্টের সকল কার্যক্রম একদিনেই সম্পন্ন হয়। আবেদন ফরমটি জমা দেওয়ার পর দুটি কাউন্টারে সেটি ভালো করে যাচাই-বাছাই করা হয়। আবেদনপত্রে দেওয়া তথ্যগুলো ঠিক আছে কিনা— দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা দেখবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনি আবেদন ফরমটি সার্ভারে রানিং করে দিবেন— এভাবে পরের ধাপের কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিকের জন্য আবেদনকারীকে অন্য একটি কক্ষে পাঠানো হয়। ছবি তোলার জন্য অবশ্যই রঙ্গিন পোশাক পরতে হবে। সাদা পোশাক পড়ে ছবি তোলা যাবে না। কপালে টিপ পড়া যাবে না, মুখে মেকআপ করা যাবে না, চোখে এমন কিছু ব্যবহার করা যাবে না, যাতে চোখের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিকৃত হয়। ছবি তোলার সময় কান বের করে রাখতে হবে। তাই মাথা এমনভাবে কাপড় পড়া যাবে না, যাতে কান দেখা না যায়। এক্ষেত্রে যিনি ছবি তুলবেন তিনি আপনাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
বায়োমেট্রিক ও ছবি তোলার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদন ফরমে কোন ভুল রয়েছে কিনা— তা পুনরায় জানতে চাইবেন, নাম বা তথ্যগত কোন ভুল হলে তখনই বলতে হবে, কারণ এরপর আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এরপর আপনার বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করে, ডিজিটাল স্বাক্ষর নেওয়া হবে, ছবি তুলে আপনাকে একটি ডেলিভারি রিসিট দিয়ে বিদায় দেওয়া হবে। রিসিটে পাসপোর্ট ডেলিভারির তারিখ দেওয়া থাকবে। ওই তারিখ অনুযায়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন
পাসপোর্টপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুলিশ ভেরিফিকেশন ইতিবাচক না হলে, আবেদনকারী পাসপোর্ট পাবেন না। প্রথম কোনও নাগরিক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে, তাকে অবশ্যই পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নিতে হবে। রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই। তবে রি-ইস্যুর সময় যদি বাবার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বৈবাহিক অবস্থার তথ্য পরিবর্তন করতে চান, তাহলেও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রি-ইস্যু হলেও আবেদনকারীকে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নিতে হবে।