অনলাইন ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, লাদাখে আমাদের ২০ জন বীর জওয়ান নিহত হয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে তারা ভারত মাতার দিকে যারা চোখ তুলে তাকিয়েছিল তাদের চরম শিক্ষাও দিয়েছেন।
লাদাখ সীমান্তের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। ভার্চুয়াল এই বৈঠকে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব বিরোধী দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মোদি বলেন, ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনের কোনও আগ্রাসন হয়নি। দেশের সীমান্ত কেউ লঙ্ঘন করতে পারেনি। কোনও পোস্টও দখল করেনি চীন।
দেশকে রক্ষা করার জন্য যা যা করার দরকার, তা ভারতীয় সেনাবাহিনী করেছে বলেও বৈঠকে মন্তব্য করেন মোদি। তিনি বলেন, “জওয়ানদের ওপর পুরো ভরসা রয়েছে দেশের। আমি ওই বীর জওয়ানদের একথা বলতে চাই, পুরো দেশ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।”
মোদি বলেন, এখন ভারত, যেরকম সক্ষম, কেউ দেশের এক ইঞ্চি জমি নিতে পারবে না। প্রয়োজনে যে বিভিন্ন অঞ্চলে লড়াই করার জন্য সেনা প্রস্তুত।
সর্বদলীয় বৈঠকের শুরুতেই কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘আরও আগে এই সর্বদলীয় বৈঠক হওয়া উচিত ছিল। এত দেরি হয়ে যাওয়ার পরেও আমরা অন্ধকারে রয়েছি। এ সম্পর্কে সরকারের কাছে আরও কিছু জানতে চায় কংগ্রেস।
কবে চীনা বাহিনী লাদাখে আমাদের এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছিল, ৫ মে নাকি তার আগে? সরকার কি সীমান্ত এলাকার উপগ্রহ চিত্রের উপর নিয়মিত নজর রাখেনি? এলএসি বরাবর কোনও অস্বাভাবিক কার্যকলাপের খবর কি আমাদের গোয়েন্দারা দেননি? ভারতীয় এলাকায় হোক বা চীনের দিকে, এলএসিতে বড় সৈন্য সমাবেশ যে চীন করেছে, তা কি আমাদের সামরিক গোয়েন্দারা সতর্ক করেননি? সরকার কী মনে করছে, গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল? এখনও ওখানকার পরিস্থিতি কী তা নিয়ে আমরা কিছু জানতে পারছি না। পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছি।”
উত্তর সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার জন্য ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’ নামে যে বাহিনী গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল, সেই বাহিনী এখন কী অবস্থায়? তাও জানতে চান কংগ্রেস সভানেত্রী।
দেশের সামরিক বাহিনীর কর্মদক্ষতার প্রতি কংগ্রেসের বিশ্বাস আছে- এমন মন্তব্যও করেন সোনিয়া গান্ধী।
বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘চীনে গণতন্ত্র নেই, সেখানে একনায়কতন্ত্র চলে। তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
মমতা বলেন, ‘এক হয়ে কথা বলুন, এক হয়ে ভাবুন, এক হয়ে কাজ করুন। আমরা দৃঢ়ভাবে সরকারের পাশে রয়েছি।’
সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাঙ্গ বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ওপর পুরো আস্থা রয়েছে। অতীতেও যখন দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তখনও প্রধানমন্ত্রী নজির সৃষ্টিকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
সর্বদলীয় বৈঠকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জেডিইউ প্রধান নীতিশ কুমার, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ও এনপিপি প্রধান কনরাড সাংমা, ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন, বিজেডি নেতা পিনাকি মিশ্র। এছাড়া বিজেপি, এআইডিএমকে, টিআরএস, এলজেপি, বসপা, সপা, শিবসেনাসহ বিরোধী দলগুলোর নেতারা অংশ নেন।
পাঁচটি করে সাংসদ না থাকায় এই বৈঠকে ডাক পাননি আম আদমি পার্টি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আরজেডির লালুপ্রসাদ যাদব ও এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।
উল্লেখ্য, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে উত্তেজনার পর গত ১৫ জুন (সোমবার) উভয় পক্ষ সংঘাতে জড়ায়।
ওই সংঘাতে অন্তত ২০ ভারতীয় সেনা নিহত ও ৭৬ জন আহত হন। শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে, চীন কর্তৃক আটক ১০ ভারতীয় সেনা সদস্যকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে চীনের পক্ষ থেকে হতাহতের কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি এবং আটক কিংবা মুক্তির কথাও অস্বীকার করা হয়েছে।