ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের বৈধ এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে তার কক্ষ বের করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে কক্ষটি দখলে নেন তারা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হলের ৫৬২ নম্বর রুমে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এক সাংবাদিককে হেনস্থা করা হয়।
পরে হলের আবাসিক শিক্ষকরা ওই রুমের সামনে এসে দরজা খুলতে বললে প্রায় ৪০ মিনিট পর দরজা খুলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম ফারহান সাইফুল। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের তাওহীদুল ইসলাম, ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শরিফুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৮-১৯ সেশনের শাখাওয়াত অভি, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শেখ ইমরান ইসলাম ইমন এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মুহাম্মদ সামিন চৌধুরীসহ আরও ১৫-২০ জন। তারা সবাই হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনের অনুসারী।
ভুক্তভোগী সাইফুল জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে আমায় হল থেকে ৫৬২ নং রুমে সিট বরাদ্দ দেওয়া হলে আমি এ কক্ষে উঠি। সন্ধ্যার দিকে অভিযুক্তরা আমার রুমে এসে পরিচয় জিজ্ঞেস করে। আমি হলের পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও তারা বলে ‘হলের সিট কি প্রশাসন দেয়?’, ‘হলে কীভাবে উঠতে হয় তা জানস না?’ পরে আমিসহ আমার বন্ধুদের মারধর ও গালিগালাজ করে রুম থেকে বের করে দেয় এবং তারা রুমে অবস্থান নেয়।
এদিকে, ঘটনার সময় দৈনিক আজকালের খবরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তাকেও হেনস্থা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তার হাত ধরে টানাটানি ও কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে হুমকি দেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হলের আবাসিক শিক্ষক আইনুল ইসলাম ও মো. ইমাউল হক সরকার (টিটু) ৫৬২ নম্বর রুমে গিয়ে তাদের পরিচয় দিলেও দরজা খোলেননি ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় কক্ষটির ভেতরে ইংলিশ ফর স্পিকার অব আদার ল্যাংগুয়েজের আরাফাত হোসেন মাহিন, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের এনামুল হক পলাশ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের মারুফ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শরীফুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিবলী সাদিক অবস্থান করছিলেন। তারা সবাই ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। পরে তাদের ছাত্রলীগের জৈষ্ঠ্য কয়েকজন কর্মী এলে তারা দরজা খোলেন। পরে শিক্ষকরা দখল কক্ষ থেকে ছাত্রলীগের কর্মীদের বের করে দেন। সেইসঙ্গে রুমটি তালাবদ্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘ওই রুমে তিন মাস আগে আমাদের ছেলেরা উঠেছিল। এক বড় ভাই তাদের সিট দিয়ে গেছেন। পরে রকি নামের এক বড় ভাই নাকি বহিরাগত ছাত্র তুলতে চাইছিলেন। এই কারণে ঝামেলা হইছিল। এর বেশি কিছু আমি জানি না’।
তবে কক্ষটির আশপাশের শিক্ষার্থীরা জানান, এই রুমে এতদিন পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী অবস্থান করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পরই হল থেকে রুম বরাদ্দ নিয়ে রুমে উঠেন সাইফুল।
হলের আবাসিক শিক্ষক ও কক্ষ বরাদ্দ বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আইনুল ইসলাম বলেন, নিঃসন্দেহে শিক্ষকদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি অপরাধ। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে জানানো হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চয়ই নেব।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান বলেন, হল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে রুমটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে রুমটি বৈধ শিক্ষার্থীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সাংবাদিক হেনস্থার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেব।