বিদেশে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি এবং জামাতার ডেভিড বার্গম্যানের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতার প্রশ্নে অনেকটা বিরক্তি প্রকাশ করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেন ড. কামাল হোসেন। এ সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো মতবিনিময় ছাড়াই ভেন্যু ত্যাগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আয়োজনে সংবিধানের ৫০ দিবসের অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। এ সময় সাংবাদিকরা ড. কামালের কাছে তার কর ফাঁকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এখানে এসব কোনো প্রশ্নের জবাব দেবেন না বলে জানান।
ড. কামাল বলেন, ‘এই বিষয়ে কোনো কথা বলব না। পরে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করলেও তার জামাতা ডেভিড বার্গম্যান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে লেখালেখি ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। এ প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করেন ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি প্রশ্ন বুঝি না। পরে তিনি সেখান থেকে সাংবাদিকদের এড়িয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ১৩১ নং গ্যালারিতে এ দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
পাহাড়ে অস্থিরতায় সংবিধানের কোনো সংকট রয়েছে কি না এক শিক্ষার্থী এমন প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এটা আসলে সাংবিধানিক সংকট নয়। বরং রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
সরকারের অধীনে নির্বাচনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ও দলের সিদ্ধান্তের ওপর সেটি নির্ভর করবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮/১৯ সালে আয়কর রিটার্নে কম আয় প্রদর্শন করে ড. কামাল ও তার মেয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলা বর্তমানে হাইকোর্টে চলমান যার পরবর্তী শুনানি হবে ডিসেম্বর মাসে। তবে এরমধ্যেই ড. কামালের ২ লাখ ১৬ হাজার ৭১৮ মার্কিন ডলার আয়ের তথ্য নতুন করে পাওয়া গেছে। এই আয়ের বিষয়টি তার আয়কর রিটার্ন পেপার বা হাইকোর্ট নথিতে উল্লেখ করা হয়নি।
ইউনাইটেড রিপাবলিক অব তানজানিয়া এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (হংকং) এর মধ্যকার আইনি সমস্যা ড. কামাল সহ আরও দুই আইনজীবীর সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালে সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করে দিয়ে এই আয় করেছিলেন তিনি। এ ছাড়াও ড. কামাল ইরান-যুক্তরাষ্ট্র মধ্যকার দাবি নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল, মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের সমুদ্রসীমা এবং গায়ানা ও সুরিনামের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের বিষয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল সহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক সালিশি মামলার সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তার নিজের জীবন বৃত্তান্তে এমন অন্তত আঠারোটি মামলার তালিকা রয়েছে। এসব মামলায় ভালো আয় করলেও সেসব আয়ের কর দিয়েছেন কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক তদন্তে দেখা যায়, ড. কামাল তার আইনি সেবা প্রতিষ্ঠানের ৬ কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। এই ‘ল ফার্মে’ তিনি ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক এবং তার মেয়ে ২০ শতাংশের। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন গড়ে উঠলে এর বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করেন ড. কামালের বিদেশি জামাতা ডেভিড বার্গম্যান।
তিনি অপপ্রচার চালান যুদ্ধপরাধ বিষয়ক ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধেও। পরে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলে তিনি মুচলেকা দেন। এরপরে বিদেশে বসেও বাংলাদেশ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নানা অপপ্রচার চালাতে থাকেন। কোভিড-১৯ এর সময় তার সম্পাদিত পোর্টালে তিনি লিখেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবেন।