চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত কলেজছাত্র হিমাদ্রী মজুমদার হিমু হত্যাকাণ্ডে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত। একই মামলায় নিম্ন আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রায় দেন। এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট হিমাদ্রি হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন- মাহাবুব আলী খান ড্যানি, জাহিদুল ইসলাম শাওন ও জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ। খালাস পাওয়রা হলেন, শাহ সেলিম টিপু ও শাহাদাৎ হোসাইন সাজু।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এ-লেভেলের পরীক্ষার্থী ছিল হিমু। মাদকবিরোধী সংগঠন শেকড়ের সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ নিয়ে শাহ সেলিম টিপুর ছেলে রিয়াদের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে। এর জেরে ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় শিল্পপতি শাহ সেলিম টিপুর ‘ফরহাদ ম্যানশন’ নামের ১০১ নম্বর বাড়ির ছাদে হিমুকে একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। মারধরের পর হিংস্র কুকুর লেলিয়ে ও ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর একই বছরের ২৩ মে হিমাদ্রীর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় তার মামা শ্রীপ্রকাশ দাশ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর পুলিশ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ এসএম মজিবুর রহমান এ মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় ছয় সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়ার পর ২০১৪ সালের ২১ জুলাই এক আসামির করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলায় ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। ওই স্থগিতাদেশের অনুলিপি ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম আদালতে পৌঁছালে মামলাটির বিচার কাজ থেমে যায়।
এরপর ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট উচ্চ আদালতের একই বেঞ্চ তাদের দেওয়া ছয় মাসের ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে। সেই আদেশের অনুলিপি ২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম আদালতে এসে পৌঁছায়।
এরপর ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক রেজা তারিক আহমেদের আদালতে আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ২১ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বিচার শেষ না হওয়ায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের আগে ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ মামলাটি চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর হয়ে যায়। ওই আদালতে বিচারক পদ ছিল শূন্য। পাঁচ মাস পর ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট ওই আদালতে নতুন বিচারক যোগ দেন। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর হিমু হত্যা মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ।
পাঁচটি নির্ধারিত দিনে যুক্তি উপস্থাপন করে ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর ১ নভেম্বর আসামি শাহ সেলিম টিপুর আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। এরপর ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ৩২ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করেন মামলার পাঁচ আসামির আইনজীবী। ১৬ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করতে ২৮ জুলাই সময় নির্ধারণ করেন আদালত।
কিন্তু ওইদিন বিচারক ছুটিতে থাকায় রায় ঘোষণা করা হয়নি। এরপর ১১ আগস্ট রায় ঘোষণার দ্বিতীয় দিন ধার্য করা হয়। ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম আদালতে ‘ফুল কোর্ট রেফারেন্স’ থাকায় রায় ঘোষণা করা হয়নি। এরপর ১৪ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন এবং হিমুকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা জেলে আপিল করেন। সেই আপিলের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আজ এ রায় দিলেন।