January 10, 2025, 12:24 pm

যৌন শোষণের জন্য পাচার হয়েছিলেন শামীমা, দাবি আইনজীবীর।

অনলাইন ডেক্স
  • Update Time : Tuesday, November 22, 2022,
  • 28 Time View

লন্ডন থেকে সিরিয়ায় গিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগম। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানো এই নারী যৌন শোষণের জন্য মানবপাচারের শিকার হয়েছিলেন। রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়া শামীমার আইনজীবীরা যুক্তরাজ্যের একটি আদালতে তার পক্ষে এই যুক্তি তুলে ধরেছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

 

প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, স্কুল জীবনে ব্রিটেন ত্যাগ করে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়া শামীমা বেগমের পক্ষে সোমবার (২১ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যের স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশনে (এসআইএসি) তার আইনজীবীরা যুক্তি তুলে ধরেছেন। যেখানে আইনজীবীরা বলেন, ‘শিশু পাচার ও যৌন শোষণের শিকার হয়েছেন শামীমা। অতি তাড়াহুড়ো সিদ্ধান্ত তাকে নির্বাসিত করেছে। ’

শুনানিতে শামীমার আইনজীবী সামান্থা নাইটস বলেন, ‘এই ঘটনাটি ১৫ বছরী একটি ব্রিটিশ শিশুর সঙ্গে সম্পর্কিত। আমার মক্কেল ও তার বন্ধুরা আইএসের প্রচারে প্ররোচিত এবং প্রভাবিত হয়েছিল। ’

লিখিত যুক্তিতে তিনি বলেন, ‘তদন্ত না করেই তার নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করা হয়েছে। শামীমা পাচারের শিকার শিশু কি না তা এখনও কম বিবেচনা করা হচ্ছে। যৌন শোষণের জন্য আইএস এর দলে ভেড়ানো, স্থানান্তরিত করা এবং সিরিয়ায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল তাকে, এমন প্রমাণ রয়েছে আমাদের কাছে। ’

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনজীবীরা শুনানিতে বলেছেন, ‘শামীমার মামলাটি জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে। এটি পাচারের ঘটনার চেয়ে বড়। ’

মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০১৫ সালে শামীমা যুক্তরাজ্য থেকে জঙ্গি সংগঠন আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যান। তার সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। তারা হলেন- খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আব্বাসি। তখন খাদিজার বয়স ছিল ১৬ বছর ও আমিরার ১৫ বছর।

শামীমা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার একটি বন্দীশিবিরে আটক রয়েছেন। আইএস পতনের পর ২০১৯ সালে সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে শামীমার খোঁজ মিলে। তখন শামীমা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার আকুতি জানান। কিন্তু একই বছরে তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।

নাগরিকত্ব বাতিলের মামলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি চেয়ে গত বছর ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন শামীমার আইনজীবী। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা শামীমার ওই আবেদন নাকচ করে দেন। পরে ফের আপিল করেন তিনি। সেই আপিলের শুনানি ছিল সোমবার।

শুনানিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা পর্দার আড়াল থেকে প্রমাণ দিয়ে বলেন, ‘২০১৫ সালে সিরিয়ায় যাওয়া শিশুরা আইএস সম্পর্কে খুব কমই জানতো। আইএস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে কি করছে তারা জানতে পারবে না। ’

এই ব্রিটিশ গোয়েন্দা আরও বলেন, ‘কীভাবে ১৫ বছরের একটি মেয়ে শিশু জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তা আমার বোধগম্য নয়। কেন তার বিষয়ে পাচারের সংজ্ঞা কাজ করছে না। ’

অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকারের আইনজীবী জেমস ইডি বলেন, ‘শামীমা চার বছর আইএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আইএসের পতনের পরই তিনি গোষ্ঠীটি ছেড়েছেন। নিজের নিরাপত্তার জন্যই শামীমা এমনটি করেছেন, এমন প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। ’

এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে যখন তার খোঁজ মিলে তখন তিনি অনেকগুলো মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের আগের সাক্ষাৎকারগুলোতে আইএসে যোগ দেওয়া নিয়ে তিনি কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেনি। তিনি সজ্ঞানেই সেখানে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছে। ’

শামীমার মামলার শুনানির আগে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন মন্ত্রী রবার্ট জেনরিক বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের স্বার্থকে ক্ষুন্ন করলে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার অধিকার রয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিবের। এটি আমাদের মৌলিক নীতির একটি। ’

মানবাধিকার সংগঠন রিপ্রিভের তথ্যানুযায়ী, এখনও উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে ৩৬ শিশুসহ ২৫ ব্রিটিশ পরিবার রয়েছে। ওই সব শিবিরে আইএস যোদ্ধাদের সন্দেহভাজন আত্মীয়দের রাখা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71