অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় স্ত্রী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী, মেয়েসহ ১১ আত্মীয় নামে মজুরির টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এই অনিয়মের বক্তব্য নিতে গেলে রোববার (৪ ডিসেম্বর) শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে পাঁচ সাংবাদিককে হেনস্তা করা হয়।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পে কোনো অবস্থায় এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম থাকা যাবে না। এটার কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
জানা যায়, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় বছরে ৪০ দিন করে কাজের সুযোগ পান গ্রামের দরিদ্র মানুষরা। তারা রাস্তা সংস্কার, রাস্তার ঘাস পরিষ্কার, মাটি কাটা, ডোবার কচুরিপানা অপসারণের মতো কাজ করেন। শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) এই ‘অতিদরিদ্রদের’ ১৪ জনের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন এক ইউপি সদস্যের ১১ স্বজন।
এমন অনিয়মের বিষয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের কাছে বক্তব্য জানতে চাইলে তার পরিষদের একটি কক্ষে চেয়ারম্যান ও তার লোকেরা পাঁচ সংবাদকর্মীকে আটকে রেখে হেনস্তা করে।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আলিমুল হকসহ কয়েকজন এ হামলা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির কাজ শুরু হয়েছে। আংগারিয়া ইউনিয়নে ৬৮ শ্রমিকের অনুকূলে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের চরচটাং গ্রামে ১৪ শ্রমিক দিয়ে একটি মাটির রাস্তা সংস্কার চলছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন। ১৪ শ্রমিকের নামের তালিকায় ইউপি সদস্যের স্ত্রী নাছিমা বেগম, ছেলে আলিমুল হক মোল্যা, মেয়ে সোনিয়া বেগম, ছেলের স্ত্রী হালিমা আক্তার, ভাই আবু সিদ্দিক মোল্যা, ছেলের শাশুড়ি-শ্যালিকাসহ ১১ জনের নাম রয়েছে। তাদের নামের বিকাশ নম্বরে শ্রমিকের মুজরি দেওয়া হচ্ছে। ওই তালিকা দিয়ে গত অর্থবছরে একটি প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ কাজের জন্য শ্রমিকদের প্রতিদিন ৪০০ টাকা মুজরি দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিকা প্রস্তুত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ওই শ্রমিকদের বিকাশ নম্বরে কাজের টাকা পরিশোধ করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে চরচটাং গ্রামে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ২০ শ্রমিকের বিপরীতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের নামের তালিকার বিকাশ নম্বর দিয়ে ওই টাকা তুলেছেন। সেই প্রকল্পে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ধানখেতে ৫০ মিটার রাস্তা সংস্কার করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কয়েক সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছেন, এমন তথ্য পেয়েছি। তারা এখনও অভিযোগ নিয়ে আসেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।