সরকারী নানা খাতের অর্থ আত্মসাৎ এবং একাধিক ঘটনায় বির্তকিত রাঙ্গাবালী ইউএনও মাশফাকুর রহমান অবশেষে বিদায় নিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে রাঙ্গাবালী উপজেলা চত্বর থেকে পুলিশ প্রটোকলে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছরিয়ে পরেছে। এর আগে ইউএনও মাশফাক শরিয়তপুরের এডিসি হিসেবে পদন্নোতি পেলেও নানা কারনে তাকে অবমুক্ত করেনি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। অপরদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর ইউএনওকে নিয়ে একটি র্শীষগনমাধ্যমে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ হলে ২৮ সেপ্টেম্বর তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের এপিডি অনুবিভাগে ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু ইউএনও যথাযথ ভাবে দায়িত্ব হস্তান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি অবমুক্ত হয়নি।
সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর তাকে অবমুক্ত করেন ডিসি মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এদিকে র্দীঘদিন রাঙ্গাবালী উপজেলায় ইউএনও ও এ্যাসিল্যান্ডের দায়িত্ব পালন করেও পুলিশ প্রটোকলে বিদায় নেয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা বলেন-রাঙ্গাবালী উপজেলার ৯টি হাট-বাজারের বিপরীতে খাস টোল আদায়কৃত তিন বছরের অন্তত চার কোটি টাকা কোষাগারে জমা না দিয়ে ইউএনও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মান না করে অর্থ আত্মসাৎ, নিজ কার্যালয়ের কর্মচারীকে মারধোরসহ নানা অভিযোগের ঘটনায় তদন্তে সত্যতা পেয়েছে জেলা প্রশাসন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে পাঠায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। ইউএনও কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে ডিসির পাঠানো ওই সুপারীশ প্রতিবেদনে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সুপারীশ করেছেন বলে নিশ্চিৎ করেন জেলা প্রশাসন।
ডিসির পাঠানো ওই প্রতিবেদনে আরও একাধিক অভিযোগ উল্লেখ করেছেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। অপরদিকে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মানে ইউএনওর নিয়োগ ঠিকাদার মাইদুল ইসলাম শাওনের অভিযোগ সংক্রান্ত ঘটনায় নিস্পত্তি করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। ডিসির কাছে শাওনের দেয়া অভিযাগের ঘটনায় একাধিকবার সাক্ষ্য নিয়েও জেলা প্রশাসনের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে-মুজিব বর্ষের ঘর নির্মানের কাজ দিতে রাঙ্গাবালী উপজেলা ছোটবাইশদা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মিন্টুর কাছ থেকে এক গনমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা নেয় ইউএনও। যে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে দেয়নি। বড়বাইশদা ইউনিয়নের সাকুর মৃধা বলেন-মুজিব বর্ষের ঘর পেতে এলাকার দুস্থ্য পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসনাত আব্দুল্লাহর মাধ্যমে ইউএনওকে দেন তিনি। ঘর না পেয়ে ভুক্তভোগীরা আমাকে টাকার জন্য চাপ দিলেও ইউএনও এরকাছ থেকে তিনি ওই টাকা উঠাতে পারেনি।
বড়বাইশদা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রতিবেদককে বলেন -মুজিব বর্ষের ঘর বাবদ ইউএনওর কাছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাওয়া ছিল। রাঙ্গাবালী থেকে বিদায় নেয়ার আগমূহুর্তে তিনি ২০ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে বাকি টাকা পরে শোধ করবে বলে করেনি। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল কালাম আজাদ দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, রাঙ্গাবালীর বাহেরচর বাজারে খাস জমিতে তার একটি মেরামতযোগ্য দোকানঘর ছিল। ওই জমির ডিসিআর নিতে ইউএনওকে এক লাখ টাকা দেন তিনি। কিন্তু ইউএনও তাকে ডিসিআর দেয়নি এবং টাকাও ফেরত দেয়নি। টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে তিনি শুক্রবার পুলিশ প্রটোকলে রাঙ্গাবালী থেকে বিদায় নেন ইউএনও।
চরমোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হানিফ মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া বলেন-মুজিব বর্ষের ঘর দেয়া কথা বলে তার বাবার কাছ থেকে ইউএনও দুই লাখ টাকা নেয়। পরে ঘরও দেয়নি, টাকাও ফেরত দেয়নি। রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মটরসাইকেল চালক হিরন হাওলাদার বলেন-মুজিব বর্ষের ঘর নির্মান বাবদ ইউএনওর ১ লাখ ৫৮ টাকা পেতেন। শুক্রবার ইউএনও চলে যাওয়ার সময় ওই টাকা চাইলে অফিসের নাজির মিরাজুল ইসলাম পরিশোধ করবে বলে হিরনকে আশ্বস্ত করেন ইউএনও। রাঙ্গাবালী থানার ওসি নুরুল ইসলাম মজুমদার দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, উপজেলা পরিষদের একটি মাত্র গাড়ী, যেটা সব-সময় এ্যাসিল্যান্ড মহোদয়ের কাছে থাকে।
তাই আমি তাকে আমার গাড়ীতে করে তাকে পৌছে দিয়েছি। পুলিশ প্রটোকলে বিদায় নিয়েছেন এটা সত্য নয়। এদিকে রাঙ্গাবালীর এ্যাসিল্যান্ড সালেক মুহিদ বলেন, এখানে একটি মাত্র গাড়ী। সেটা সাময়িক ভাবে বিকল থাকায় চালক আমার সঙ্গে রয়েছে। তাই ইউএনও স্যার গাড়ী দিতে পারিনি। পুলিশ প্রটোকলে বিদায় নেয়ার কথা গুজব। এদিকে র্দীঘদিন একই স্থানে চাকুরি করার পরও ইউএনও মাশফাকুর রহমানকে নিয়ে কোনো বিদায়ী সংবর্ধনা হয়নি। তার বিদায় বেলাতে উপজেলা চত্বরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল বলে দাবি উপজেলা পরিষদের একধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।