মানুষের জীবনের সঙ্গে বাত রোগ অনেকটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে কোনো বয়সেই এই রোগ হতে পারে। দেশের ২৬ ভাগ মানুষ কোনো না কোনো অঙ্গে ব্যথা-বেদনায় ভুগছেন। মেডিসিন বিভাগের রিউমাটোলজির রোগ এই ‘বাত’ হলো ৬৪৪ ধরণের।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয়, মাজা ব্যথা বাত বা স্পনডাইলোআর্থাইটিস, এসএলই বা লুপাস ছাড়াও সেপটিক আর্থ্রাইটিস, রিয়্যাক্টিভ আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন অনেক মানুষ।
তবে নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন, সুষম খাদ্যগ্রহণ, প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন নেয়া, নিয়মিত প্রয়োজনীয় ব্যয়াম করা, জীবন যাপনে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা এবং নিয়ম করে ওষুধ সেবন করা জরুরী। সঠিক চিকিৎসা নিলে বাতের রোগীরা ভালো থাকে। তাই যতদিন যেমন করে ওষুধ খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে তা চালিয়ে যেতে হবে। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া কারো কাম্য নয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বাতের চিকিৎসায় ব্যথানাশক খেলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন হলে বাত রোগীদের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান প্রফেসর নজরুল রিউমাটোলোজি ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ (পিএনআরএফআর) ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
অধ্যাপক নজরুল রিউমাটোলজি ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ (পিএনআরএফআর) ট্রাস্ট কর্তৃক সপ্তমবারের মতো রোগী সচেতনতামূলক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাত রোগে ভোগা রোগী ও তাদের স্বজনরা অংশ নেন ও বাত ব্যথার কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরেন। এ সময় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বাত রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে সায়েন্টিফিক প্রেজেন্টেশন দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পথিকৃৎ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্সেসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. কামাল হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, ব্র্যাকের হেলথ এন্টারপ্রাইজের প্রধান ব্রি. জেনারেল (অব.) ডা. তৌফিকুল হাসান সিদ্দিকী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বাত রোগীদের জন্যই পিএনআরএফআর ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাত রোগীদের জীবনযাপন সহজ করাসহ নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে আসছে এই ট্রাস্ট।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে দিনে দিনে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হচ্ছে। অনেক জটিল ও কঠিন রোগের বিশ্বমানের চিকিৎসা দিচ্ছেন আমাদের চিকিৎসকগণ। যা সত্যি আমাদের সাহস যোগায়। আগামী দিনগুলোতে চিকিৎসকদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার গবেষণা করার জোর তাগিদ দিচ্ছেন এবং গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দও দিচ্ছেন। কারণ, গবেষণা থেকেই জানা যায় আসল চিত্র। আজকে যাদের জন্য এই আয়োজন সেই বাত রোগে আক্রান্তদেরও বাস্তবচিত্র উঠে এসেছে গবেষণায়। তাতে মনে হচ্ছে, আমাদের অনেক কিছু করার আছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্যখাত অন্যতম। স্বাস্থ্যখাতে সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিক অর্জনও রয়েছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও নির্দেশনা।