December 23, 2024, 6:55 am

১২ বছরেই অপরাধী, ৪০ তরুণীর সর্বনাশ করেছেন বহুরূপী রাজু।

অনলাইন ডেক্স
  • Update Time : Friday, January 13, 2023,
  • 33 Time View

সাবেক মন্ত্রীর ছেলে, এমপির ভাই, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা- এমন অসংখ্য পরিচয়ের আড়ালে মূলত তিনি অন্তঃসারশূন্য। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় বাড়ি থেকে ১২ বছর বয়সেই বের করে দিয়েছিলেন মা-বাবা। নিজেকে শোধরানোর পরিবর্তে হয়ে উঠেন প্রতারক। রাজুকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, তিনি বহুরূপী প্রতারক।

 

তার প্রকৃত নাম রাজুউল্যা রাজু। অনেকের কাছেই পরিচিত বিল্লাল ফারদিন নামে। ফেসবুকে চার লাখেরও বেশি অনুসারী। ৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। কোনোটির এমডি, কোনোটির আবার প্রধান নির্বাহী। অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও। এতকিছু ছাপিয়েও তার বড় পরিচয় তিনি নাকি গাজীপুরের এক সাবেক মন্ত্রীর ছেলে। যদিও ডিবি পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি- এ সবই মিথ্যা। রাজু আপাদমস্তক একজন প্রতারক।

সম্প্রতি এক তরুণীকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান রাজু। চার লাখের মতো অনুসারী ও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সভাপতি-সেক্রেটারি পদে রয়েছেন দেখে তরুণী রাজুর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেন। ধীরে ধীরে ঐ তরুণীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন তিনি। এক পর্যায়ে তরুণীকে জাপানে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দেন রাজু। জাইকার প্রজেক্টে চাকরি দেয়ার ফাঁদ পেতে তার কাছ থেকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৯ লাখ টাকা নিয়েছেন।

তবে জাপানে পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ভুক্তভোগী তরুণী বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত ঐ তরুণী কলাবাগান থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ তথ্য পায়, প্রতারণার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন রাজু। অন্তত ৪০ তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে পরবর্তী সময়ে তাদের সর্বনাশ করেছেন তিনি।

আমেরিকার গ্রিনকার্ড, টেক্সাসের ড্রাইভিং লাইসেন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সবই তার নীলক্ষেত থেকে তৈরি। আড়াই বছর বয়সে রাজধানীর হাজারীবাগের এক নিঃসন্তান দম্পত্তি পালক নিয়েছিলে রাজুউল্যাকে। ১২ বছর বয়সে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তাকে।

ডিবি প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, প্রতারণার টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করতেন রাজু। এখন পর্যন্ত ৪০-৪৫ তরুণীর সর্বনাশের তথ্য পাওয়া গেছে। অনেকের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন রাজু।

আসল পরিচয় মিলল যেভাবে-
ঢাকার হাজারীবাগে এক নিঃসন্তান দম্পতি আড়াই বছর বয়স থেকে রাজুকে লালনপালন করেছিলেন। কিশোর বয়সে নানা অপরাধে জড়ানোর পর বাসা থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। ২০১৩ সালে প্রথম প্রতারণার একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। নওগাঁয় সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে অর্থ আত্মসাৎ করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। রাজুর প্রকৃত নাম রাজু উল্যা। পড়াশোনা খুব বেশি না করলেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও আমেরিকা থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন বলে প্রচার করতেন। প্রতারণার জগতে রাজু তার পরিবারের ইতিহাস ও নাম বদলে মাসুম বিল্লাহ ফারদিন বলে পরিচয় দিতেন। নিজের আগের পরিচয় লুকাতে অন্য এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রে রাজু তার ছবি বসিয়েছিলেন। হোটেলে হোটেলে ছিল তার বসবাস। এরই মধ্যে একাধিক তরুণী প্রতারণার শিকার হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। এর পরই রাজুকে গ্রেপ্তার করে দুইদিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।

রাজু প্রথমে দাবি করেন, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। এরপর দাবি করেন, টেনেটুনে এসএসসি পাস করেছেন। নিজের গ্রামের বাড়ি ও মা-বাবার আসল পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এর পর রাজুকে যে দম্পতি লালনপালন করেছেন, তাদের খোঁজে নামেন ডিবি সদস্যরা। ডিবি কার্যালয়ে ঐ দম্পতিকে ডেকে আনা হয়। তারা জানিয়েছেন, কৈশোর থেকে নানা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ায় রাজুকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

এমপি রহমত আলীর ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় বলেন, আমরা দুই ভাই ও এক বোন। বড় ভাই জাহিদ হাসান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বোন রোমানা আলী টুসি সংরক্ষিত আসনের এমপি। রাজু নামে আমাদের কোনো ভাই নেই। আমাদের পরিবারের সদস্য পরিচয়ে প্রতারণার বিষয়টি জানার পর পুলিশকে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71