December 26, 2024, 4:58 am

সাহারা খাতুনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

Reporter Name
  • Update Time : Friday, July 10, 2020,
  • 89 Time View

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন মারা গেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ২৬ মিনিটে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

জ্বর, অ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে অসুস্থ অবস্থায় গত ২ জুন সাহারা খাতুনকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১৯ জুন সকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

এরপর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ২২ জুন দুপুরে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়, কিন্তু ২৬ জুন আবারও শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ফলে আবারও তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার তাকে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সাহারা খাতুনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

১৯৪৩ সালের ১ মার্চ তিনি ঢাকার কুর্মিটোলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল আজিজ ও মাতার নাম টুরজান নেসা। শিক্ষাজীবনে তিনি বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি আর্জন করেন এবং রাজনীতির পাশাপাশি আইনপেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

ছাত্র জীবনেই সাহারা খাতুন রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। আইনপেশায় আসার পর সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা গঠিত হলে তাতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করেন। তখন থেকেই মিছিল মিটিং সবকিছুতেই অংশগ্রহণ করেছেন। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিনও তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।

সাহারা খাতুন প্রথমে নগর আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মহিলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক, পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদিকা এবং একই সাথে নগর আওযামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-আইন সম্পাদিকা, পরে তিনি আইন সম্পাদিকা নির্বাচিত হন, তখন তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ এবং মহিলা আওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ আর গ্রহণ করেননি। অতঃপর তিনি পরবর্তী কাউন্সিলে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।

রাজপথের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সরব। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, আইয়ুব-ইয়াহিয়া বিরোধী আন্দোলন, দেশ স্বাধীনের আন্দোলন, ৭৫’র পর অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় আন্দোলন করেছেন রাজপথে। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে হরতাল, সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে একাধিকবার গ্রেফতার এবং নির্যাতিত হয়েছেন।

আইনপেশায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের বহ সংখ্যক নেতাকর্মীর মামলা বিনা পয়সায় লড়েছেন। যারা আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা জানতেন জামিনের জন্য অ্যাডভোকেট সাহারাসহ আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আছেন। আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের কাছে ভরসার জায়গা ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।এমনিভাবে সারাজীবনের আইনপেশায় তিনি আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর পেছনে লড়েছেন এবং তাদের জেল থেকে মুক্ত করেছেন।

তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। এর আগে ফখরুদ্দিন, মঈনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার করা হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার সঙ্গে আবারও গ্রেফতার হন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি ছিলেন কল্যাণমূলক রাজনীতির অগ্রদূত ও ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার খুব প্রিয়।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০৮ এর নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর মন্ত্রিসভা গঠনের সময় ডাক পড়ে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের। তিনি শপথগ্রহণ করেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে তার দফতরে প্রবেশ করেন। ২০১২ সালে মন্ত্রণালয়ের রদবদল ঘটলে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71