December 23, 2024, 12:14 pm

করোনায় বন্দির মৃত্যু, সিলেট কারাগারে আতঙ্ক!

Reporter Name
  • Update Time : Wednesday, May 13, 2020,
  • 417 Time View

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বিরাজ করছে করোনা আতঙ্ক। কারান্তরীণ হত্যা মামলার এক আসাসি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর বন্দি ও কর্মকর্তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে এই আতঙ্ক। মারা যাওয়া ওই হাজতির ওয়ার্ড লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া কারাগারের এক জেলারসহ ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টিনে। কারান্তরিণ হওয়ার দুইমাস পর ওই বন্দির করোনা সংক্রমণ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিস্ময়। কারাগারের ভেতর তিনি কিভাবে সংক্রমিত হলেন তা খতিয়ে দেখছে কারা কর্তৃপক্ষ।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ৫ মার্চ একটি হত্যা মামলায় কারান্তরিণ হন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের ঘড়াই গ্রামের আহমদ হোসেন (৫৫)। মে মাসের শুরুর দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তার জ্বর, সর্দি ও পরে কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। শুরুতে তাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পরে অবস্থার অবনতি হলে গত ৮ মে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর কর হয়। তার মাঝে করোনার উপসর্গ থাকায় তাকে ওসমানীতে ভর্তি না করে পাঠানো হয় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ মে তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার আগের দিন তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর মারা যাওয়ার পরের দিন অর্থাৎ ১১ মে সোমবার রাতে তার পরীক্ষার ফলাফল আসে পজেটিভ।

আহমদ হোসেনের করোনা পজেটিভ ছিল এই খবর পাওয়ার পরই তিনি কারাগারের যে ওয়ার্ডে থাকতেন সেটি লকডাউন করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। ওই ওয়ার্ডে ৮৩ জন বন্দি রয়েছেন। এছাড়া আহমদ হোসেনসহ ওই ওয়ার্ডের বন্দিদের সংস্পর্শে আসা কারারক্ষী, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ও জেলার মুজিবুর রহমানকেও রাখা হয় কোয়ারেন্টিনে।

কারাভ্যন্তরে বন্দির আক্রান্ত হওয়াকে ঘিরে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। আহমদ হোসেন কারাগারে কিভাবে সংক্রমিত হলেন এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত কেউ করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হলে ১৪ দিনের মধ্যেই উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়। কিন্তু আহমদ হোসেন কারান্তরিণ হয়েছেন দুইমাস আগে। তাই বাইরে থেকে তিনি সংক্রমিত হয়ে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাহলে কী সিলেট কারাগারে কোভিড-১৯ আক্রান্ত অন্য কেউ আছেন? নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপের পরও কারা অভ্যন্তরে কিভাবে ছোবল হানলো করোনা? কারা কর্মকর্তারা এখন খুঁজছেন এসব প্রশ্নের উত্তর।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আহমদ হোসেন মারা যাওয়ার পর তিনি যে ওয়ার্ডে থাকতেন, সেটি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বন্দি আছেন ৮৩ জন। এর বাইরে কারা কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও রক্ষীসহ ২৪ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।’ কোয়ারেন্টিনে থাকাদের মধ্যে জেলার মুজিবুর রহমান নিজেও রয়েছেন।

কারা কর্মকর্তারা জানান, বিশেষ সতর্কতা হিসেবে গত মার্চ মাস থেকেই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা নতুন বন্দিদের স্যানিটাইজ করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ‘আমদানি ভবনের’ আগমনী ওয়ার্ডে। সেখানে একরাত রেখে শরীরের তামপাত্রা পরিমাপ করা হয়। পরদিন তাদেরকে আরেকটি নতুন ওয়ার্ডে নিয়ে রাখা হয় ১৩ দিন। সবমিলিয়ে নতুন বন্দিদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখার পর পুরনো বন্দির সাথে রাখা হচ্ছে।

এছাড়া গত এপ্রিল থেকে কারাগারে বন্দিদের সাথে স্বজনদের সরাসরি সাক্ষাৎ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও গেল ২২ মার্চ থেকে কারাগারের বন্দিদের আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এতো সতর্কতার পরও কারাবন্দি আহমদ হোসেন কিভাবে করোনা সংক্রমিত হলেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71