হলি আর্টিজানে রোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের পর সাঁড়াশি অভিযানে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাঠামো ভেঙে দেয়া গেলেও মৌলবাদের অর্থনীতি রয়ে গেছে আগের মতোই।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক গবেষণার তথ্য বলছে, এখনো দেশের মূল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চেয়ে মৌলবাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বেশি। মহামারীর কারণে অর্থনৈতিক সংকটে তৈরি হওয়া হতাশার পথে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।
২০১৭ সালে হলি আর্টিজানে হওয়া দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও রোমহর্ষক জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও হামলাকারীদের প্রশিক্ষণের ধরণ ও ব্যাপ্তি বিচার করে এতে ৭ থেকে আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
তবে মূল পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী ও অর্থসংগ্রাহক বাশারুজ্জামান চকলেট অভিযানে নিহত হওয়ায় এ জঙ্গি হানার অর্থায়নের সামগ্রিক চিত্র সম্পর্কে তদন্ত শেষেও অন্ধকারে সংস্থাটি। তবে বিভিন্ন সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে জঙ্গি সংগঠনগুলো।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, আট লাখ টাকা খরচ হলেও শুধুমাত্র হলি আর্টিজানের অ্যাটাকে কোনো জায়গা থেকে আসেনি।
অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্যে যে সময় দরকার, ওই সময়টা তারা পায়নি। নব্য জেএমবির সবগুলো অর্থের উৎস আমরা এখনো খুঁজে পায়নি। এখানে আমাদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি একটি ত্রিভূজের মতো সংগঠিত। যার শীর্ষবিন্দুতে কর্পোরেট হেডকোয়ার্টারের মতো আছে ধর্মের সাইনবোর্ডধারী রাজনৈতিক দল। আর তলে আছে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ও মৌলবাদের অর্থনীতি।
তাদের গবেষণার তথ্য বলছে, আর্থিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন খাতে ২০১৯ সালে মৌলবাদের অর্থনীতির নিট মুনাফা আনুমানিক ৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা।
আর চল্লিশ বছরে পুঞ্জিভূত নিট মুনাফা তিন লক্ষ টাকারও বেশি। দেশের মূল অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি যেখানে ৭.৫ থেকে ৭.৮ শতাংশ, মৌলবাদের অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা ৯-১০ শতাংশ।
জিহাদের প্রতিকৃতি প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতা শাহরিয়ার কবির জানান, এদেরকে যতই মাঠে দমন করুন না কেন, এদের মূলটা রয়ে গেছে। একটা গাছের ডালপালা ছেঁটে দিলে সে গাছটা আরো শক্তিশালী হয়।
কিন্তু একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বলছে, আর্থিক চ্যানেল ব্যবহার করে জঙ্গি অর্থায়ন হচ্ছে কিনা তার বাইরে নজরদারীর সুযোগ নেই তাদের।
অন্যদিকে কাউন্টার টেরোরিজম বলছে, তদন্ত সংস্থা হিসেবে ঘটনা ভিত্তিক লেনদেনের বাইরে বৃহৎ আকারে মৌলবাদী অর্থনীতির স্বরূপ উদঘাটন তাদের কাজের আওতায় পড়ে না।
মনিরুল ইসলাম জানান, অর্থনীতি সমিতি অনেক বড় আকারে এটা দেখছে, তাদের সাথে আমাদের যে তদন্ত পদ্ধতি সেটা ভিন্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান রাজী আল হাসান জানান, ব্যাংকের বাইরে কি করে সেটা আমাদের জানা নাই।
তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় এ-দুই সংস্থার একতিয়ারের বাইরে যে মৌলবাদী অর্থনীতির কথা শোনা যাচ্ছে তা কি নজরদারীর বাইরে থেকে যাবে।