নতুন বছরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পা রাখবে বাংলাদেশ। তবে গৌরবোজ্জল বছরে পা রাখলেও করোনার ছোবল ওলট পালট করে দিয়েছে ২০২০ সালের বিশ্ব অর্থনীতি। যার অভিঘাতে বছরজুড়ে বিপর্যস্ত ছিল দেশের ব্যবসা বাণিজ্য, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান।
দারিদ্র্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন মুখ। এর মাঝেও অর্থনীতিতে কিছুটা আশার আলো জুগিয়েছে প্রবাসী আয়, রেকর্ড রিজার্ভ ও প্রবৃদ্ধি। তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে ছিল মূল্যস্ফীতির চাপও।
ক্যালেন্ডারের পাতায় কালো অধ্যায় খচিত বছর হয়েই থাকবে বিশ বিশ সংখ্যাটি। কভিড নাইনটিন ছোবলে লাখো প্রাণ তো গেছেই বিশ্ব অর্থনীতির সব সমীকরণও গেছে, পাল্টে ।
গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও বছরজুড়ে মোকাবেলা করেছে বহু চ্যালেঞ্জ। তবে চূর্ণ বিচূর্ণ অর্থনীতিতে প্রায় সারাবছর ঘুরে ফিরে এসেছে কভিড ১৯ এর অভিঘাত। নজীরবিহীন এক মহামারীর বাস্তবতা কাঁধে নিয়েই অনিশ্চিত বছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী।
সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদন বলছে, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর জুন শেষে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২৯ দশমিক ৪ এবং অতিদারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে ঠেকেছে। যা করোনার আগেও ছিল অর্ধেক।
বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র, মাঝারি কিংবা রপ্তানি খাত; সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে সবারই ব্যবসায়িক আকার। ধস নামে শিল্প উৎপাদনে। চাঙ্গা হতে থাকা আবাসন খাতেও নেমে আসে বিপযর্য়। রপ্তানির শীর্ষ খাত তৈরি পোশাকের রপ্তানি বিশ্ববাজারে অবস্থান ধরে রাখলেও করোনার শুরুতেই এপ্রিল পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয় ৩.১৮ বিলিয়ন ডলারের। সবমিলে পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে ১৭.৬৪ শতাংশ।
কেবল ২০২০ নয় নতুন বছরের জন্য সবচেয়ে বড় অভিঘাত নামে চাকরির বাজারে। বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠিভূক্ত প্রতিষ্ঠান-আইএফসির এক সমীক্ষায় দেখা যায় কোভিড ১৯ এর কারণে দেশের অতিক্ষুদ্র,ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত ৩৭ শতাংশ লোক বেকার হয়েছেন।
তবে করোনার সাথে লড়াই করেও দেশের অর্থনীতিতে আশার সঞ্চার করেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। যা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা (১৯৮৯.৭০) দেশের ইতিহাসে তা সর্বোচ্চ। এছাড়া বিজয়ের মাসে দেশের রিজার্ভ ছাড়িয়ে যায় ৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ ভালো অবস্থানে থাকার আন্তর্জাতিক পূর্বাভাসও মিলেছে।
অর্থনীতি বিপর্যস্ত থাকলেও মূল্যস্ফীতির খুব বেশি বাড়তি চাপ নিতে হয় নি সাধারণ মানুষকে। যা খানিকটা স্বস্তি দিয়েছে করোনাকালীন অর্থনীতিকে। এছাড়া বিবিএসের আগস্টের সাময়িক হিসাবে উঠে আসে করোনার মাঝেও দেশের মাথাপিছু আয় ছাড়ায় ২ হাজার ডলার।