রাজধানীতে রাইড শেয়ারিংয়ের নামে মোটরসাইকেল চালকদের নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সড়কে যানজট এবং দুর্ঘটনা আলোচনার অন্যতম বিষয়ে পরিণত হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর মোটরসাইকেল চালকদের বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় বিষয়টি আবারো সামনে চলে আসে। ফলে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালানো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নজরদারির ঘাটতি, বিআরটিএর প্রযুক্তির ব্যবহারে অদক্ষতার কারনে অ্যাপস প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভিস চার্জ আদায় করার ক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম করে থাকে।
বেশি চার্জ আদায় করে যাত্রিদের হয়রানি করার অভিযোগও বিস্তর। এসব অব্যবস্থাপনার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি সেবা গ্রাহক স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। ২৭ জুন দুপুরে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে এসব কথা জানান গণমাধ্যমকে।
প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরো বলেন, রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে চলে না, চলে খ্যাপে। প্রযুক্তি সেবায় নিয়ন্ত্রণ নেই, ফলে সড়কে আছে নৈরাজ্য। বিশ্বের বহু দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করে ব্যক্তিগত মোটরযান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
আরো জানানো হয়, এটি এমন একটি পরিবহন ব্যবস্থা, যেখানে গাড়ির মালিক তার নিজের প্রয়োজন মিটিয়েও ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত মোটরযান ভাড়ায় ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে মোটরযানের সংখ্যা কমিয়ে আনাই অন্যতম উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের। সরকার রাইড শেয়ারিং নীতিমালা ২০১৭ প্রণয়ন করে, যা ২০১৮ সালে পাস হয়।
আরো বলা হয়েছে, এতে পরিবহনের সংখ্যা কমার চেয়ে উল্টো পরিবহনের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সড়কে বেড়েছে নৈরাজ্য, বেড়েছে দুর্ঘটনা। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পরিচালিত এ সেবা প্রদানের জন্য সর্বপ্রথমে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ কর্তৃক এনলিস্টেড হতে হয়। সেখানে সে কী পরিমাণ গাড়িচালক ও গাড়ি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করবে তার যাবতীয় তথ্য গাড়ির লাইসেন্স ড্রাইভিং, লাইসেন্সসহ যাবতীয় তথ্যাদি জমা দিতে হয়।
আরো বলা হয়েছে, ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত করে দেওয়া হয় বিআরটিএ থেকে। কিন্তু প্রথম প্রথম মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে চললেও বর্তমান সময়ে অ্যাপভিত্তিক সেবা আর চলে না। চলে চুক্তিভিত্তিক খ্যাপের মাধ্যমে। এখন আর সড়কে বোঝা যায় না, কোনটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে চলে আর কোনটি ছিনতাইকারী ডাকাত দল বা ব্যক্তিগত কর্মজীবী মানুষের পরিবহন।
বিআরটিএর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় বর্তমানে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯০টি। এ সেবাকে অতি মুনাফার পেশা হিসেবে নিয়েছে এক শ্রেণীর লোক। কিন্তু বিআরটিএ থেকে অ্যাপভিত্তিক সেবা দেওয়ার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান এনলিস্টমেন্ট নিয়েছে, তাদের দুর্বলতা, অতি মুনাফা, সেবা প্রদানে অনাগ্রহ, মনিটরিংয়ের অভাবে আজ প্রযুক্তি সেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকার ও এ খাত থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশে যেসব রাইড শেয়ারিং এনলিস্টেড হয়েছে, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাইড শেয়ারিং অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উবারের প্রায় এক লাখ চালক রাজধানীতে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকায় আরেকটি জনপ্রিয় বাইক রাইডিং পাঠাওয়ের আছে প্রায় দেড় লাখের বেশি রাইডার। এ ছাড়াও রাজধানীতে সহজ ডট কম, স্যাম, ওভাই, ওবোন ইত্যাদির আওতায় আছে আরও প্রায় ৫০ হাজার রেজিস্ট্রার্ড বাইক।
এ হিসাবে রাজধানীতে মোট রেজিস্টার্ড বাইকারের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। তবে এ রাইডারদের অনেকেই একসঙ্গে কয়েকটি অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত। এ ৩ লাখ বাইকাররা বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি চালান দৈনিক ৬-১০ ঘণ্টা। দ্বৈত লাইসেন্সধারীদের বাদ দিয়ে মোট রাইডারের সংখ্যার হিসেবে ১ লাখ ২৩ হাজার রাইডার ৫ ঘণ্টা বা বেশি সময় বাইক চালান। তাদের আয়ের প্রধান উৎস বাইক রাইডিং।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৪ লাখ চালক অ্যাপভিত্তিক পরিবহনের সাথে যুক্ত নয়। এ চালকদের চিহ্নিতকরণের জন্য নেই আলাদা পোশাক, নেই প্রশিক্ষণ। তাদের মনিটরিংয়ে সবার আগে বিআরটিএকে প্রযুক্তিবান্ধব হয়ে অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে রাস্তায় চলা এবং প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সরকার পাবে রাজস্ব, সড়কে শৃঙ্খলার পাশাপাশি যাত্রীরা পাবেন নিরাপত্তামূলক সেবা।