বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতেছে গোটা বিশ্ব। প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে কাতারে জড়ো হচ্ছে ফুটবল প্রেমীরা। তবে কখনো কখনো ব্যক্তি ফুটবলার ছাড়িয়ে যান দলকেও। তাদের খেলায় মুগ্ধ হয়ে নিজ দলের বাইরেও আরেকটি দলকে বেছে নেয় সমর্থকরা।
মেসি-রোনালদো-নেইমার-এমবাপ্পেরা আছেন সেই তালিকার শীর্ষে। যাদের ভালোবেসে ক্লাব কিংবা দল কোনো কিছুই পরিবর্তন করতে দ্বিতীয়বার ভাবে না সমর্থকরা। তাদের মধ্যে সেরা কে তা নিয়ে হয় বিতর্ক। সেই বিতর্কে প্রতিপক্ষকে হারাতে চাই যুতসই জবাব।
২০১৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ক্লাব ও জাতীয় দলের জার্সিতে আলো ছড়ানো ১০ তারকা ফুটবলারদের নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন সাজিয়েছেন আমিরুল ইসলাম। এখানে আপনি খুঁজে পাবেন আপনার পছন্দের সেরা তারকাকে।
১০. সাদিও মানে (সেনেগাল, বায়ার্ন মিউনিখ)
কদিন আগেই নিজ দেশ সেনেগালকে আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্স জিতিয়েছেন। লিভারপুলকে একগাদা শিরোপা জিতিয়ে সবশেষ মৌসুমে যোগ দিয়েছেন জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে। বিশ্বকাপ সেনেগালের জার্সিতে মাঠে নামার অপেক্ষায় ছিলেন জাতীয় দল ও ক্লাবের জার্সিতে ২০১৭ সালের পর থেকে ২২৪ ম্যাচে ১০১ গোল ও ৩১ অ্যাসিস্ট দেওয়া মানে। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছিল সেনেগালীয়রা। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি। বিশ্বকাপের আগেই চোটে ছিটকে যেতে হয়েছে তাকে।
৯. লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)
উরুগুয়ের ফুটবল প্রেমীরা কি কখনো ভুলতে পারবে লুইস সুয়ারেজের সেই নিশ্চিত গোল হাত দিয়ে আটকে দেওয়া। ২০১০ বিশ্বকাপে ঘানার বিপক্ষে নিশ্চিত গোল আটকে দিয়ে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। পরে পেনাল্টি পেলেও সেটি মিস করে ঘানা। ম্যাচ জিতে সেমিতে পা রাখে তার উরুগুয়ে। সে ম্যাচে লাল কার্ড দেখেও উরুগুয়ের ফুটবল ইতিহাসের নায়ক হিসেবে আজও রয়েছেন সুয়ারেজ।
সাফল্য কুড়িয়েছেন ক্লাব ফুটবলেও। বার্সার হয়ে ২০১৮ ও ১৯ মৌসুমে লা লিগা শিরোপা জিতেছেন তিনি। বর্তমানে অ্যাটলেটিকোতে খেলছেন সুয়ারেজ। জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবলে ২০১৭ সালের পর ২০১ ম্যাচে মাঠে নেমে তার গোল সংখ্যা ১০২টি। সেই সাথে ৪২টি অ্যাসিস্ট আছে তার নামের পাশে। চলতি বিশ্বকাপে তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে উরুগুয়ে।
৮. রাহিম স্টার্লিং (ইংল্যান্ড, চেলসি)
চলতি বিশ্বকাপে ইংলিশদের অন্যতম আশার নাম রাহিম স্টার্লিং। চেলসির হয়ে মাঠে নামা এই ফুটবলারের কাঁধেই এবার গুরুদায়িত্ব ইংলিশদের টেনে নেওয়ার। ২০১৭ সালের পর থেকে ক্লাব ও জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নেমেছেন ২১১ ম্যাচে যেখানে তার গোল সংখ্যা ৯৭টি। সেই সাথে ৪৪টি অ্যাসিস্ট জানান দেয় সতীর্থদের দিয়ে কতটা খেলাতে পারেন ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
৭. কেভিন ডি ব্রুইন (বেলজিয়াম, ম্যানচেস্টার সিটি)
ম্যানচেস্টার সিটির প্রধান তারকা তিনি। রয়েছেন দারুণ ছন্দে। তাকে ঘিরেই বিশ্বকাপে স্বপ্ন দেখেছিল তার দেশ বেলজিয়াম। তবে মরক্কোর বিপক্ষে হার বিশ্বকাপ বড় ধাক্কা দিয়েছে তার দলকে। মধ্যমাঠে তিনি রাজ করেন। গোল করার থেকে সতীর্থদের দিয়ে গোল করাতেই বেশি ভালোবাসেন ৩১ বছর বয়সী এই তারকা। ২০১৭ সালের পর ১৮৩ ম্যাচে মাঠে নেমে ৫২ গোলের বিপরীতে ৭৫টি গোলে সহায়তা করেছেন সিটির এই তারকা ফুটবলার।
৬. ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
বয়সটা ৩৭ পেরতে চললেও এখনও যেকোনো তরুণকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে জানেন রোনালদো। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর কাঁধে ভর করেই বিশ্বকাপে পা রেখেছে পর্তুগাল। বিশ্বের কোটি ফুটবল প্রেমী রোনালদোকে ভালোবেসেই সমর্থন করেন পর্তুগালকে। কাতারে রোনালদো শেষটা রাঙাতে চাইবেন তার ভক্তদের জন্য।
তবে সময়টা ভালো যাচ্ছে না সিআরসেভেনের। আগের মতো কথা শুনছে না বল। দ্বিতীয় মেয়াদে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার পর থেকেই বিতর্ককে সঙ্গী করে খেলে যাচ্ছেন রোনালদো। তবে ম্যানইউতে আর থাকছেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৯৮ ম্যাচে মাঠে নেমে তার গোল সংখ্যা ১৬০টি। যেখানে ৩০টি সহায়তা রয়েছে তার।
৫. করিম বেনজেমা (ফ্রান্স, রিয়াল মাদ্রিদ)
নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতে পারেন তিনি। ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলতে চেয়েও পারেননি। বিতর্কে জড়িয়ে বাদ পড়তে হয়েছিল বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে। আর সেবার তার দল উঁচিয়ে ধরে বিশ্বকাপ শিরোপা। সেই বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে হয়তো তার নামের পাশেও একবার বিশ্বকাপ জয়ী নাম থাকতো। তবে হয়নি সেটি। আশা করেছিলেন এবার হবে।
সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন বেনজেমা। রিয়াল মাদ্রিদকে পথ দেখানোর পাশাপাশি কদিন আগেই জিতেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ব্যালন ডি’অর। ফ্রান্সের শক্তির জায়গা ছিলেন তিনি। তবে এবারও হয়ে ওঠেনি সেটা। চোটে বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে বাদ পড়েছেন ৩৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার। হয়তো আর কখনো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ হবে না তার।
২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২১৮ ম্যাচে মাঠে নেমে ১৩২ গোলের পাশাপাশি ৫০টি অ্যাসিস্ট রয়েছে তার।
৪. টমাস মুলার (জার্মানি, বায়ার্ন মিউনিখ)
চলতি বিশ্বকাপে টমাস মুলারকে নিয়ে এখনও স্বপ্ন দেখে জার্মানি। তবে ভালো অবস্থানে নেই তার দল জার্মানি। জাপানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খেয়ে শঙ্কায় তাদের শেষ ষোলো। তবে ক্লাব ও জাতীয় দলের জার্সিতে ২০১৭ সালের পর থেকে দারুণ সময় কাটিয়েছেন মুলার। ২০৩ ম্যাচে মাঠে নেমে ৫৪ গোলের পাশাপাশি ৯১টি গোলে সহায়তা করেছেন এই জার্মান মিডফিল্ডার।
৩. কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স, পিএসজি)
বল নিয়ে যেই ক্ষিপ্রগতিতে ছুটতে জানেন তিনি। তার সাথে পেরে ওঠা যে কারো জন্যই কষ্ট সাধ্য। ২০১৮ বিশ্বকাপে এমবাপ্পে গতির কাছে নত শিকার করেছিল প্রতিপক্ষের ফুটবলাররা। ফলাফল ফরাসিদের চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক এমবাপ্পে। ২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮৭ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন এমবাপ্পে। যেখানে তার গোল সংখ্যা ১৪৬টি এবং অ্যাসিস্ট ৬৪টি।
এরইমধ্যে ক্লাবগুলোর পছন্দের শীর্ষে নিয়ে গেছেন তিনি। বর্তমানে পিএসজিতে আছেন রেকর্ড পারিশ্রমিকে। প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন ২৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার। রয়েছেন দারুণ ছন্দে। চলতি বিশ্বকাপেও তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে ফরাসিরা।
২. রবার্ট লেভানডস্কি (পোল্যান্ড, বার্সেলোনা)
পোল্যান্ড বিশ্বকাপে এসেছে তার হাত ধরে। ক্লাবেও বহু শিরোপা এনেদিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখকে। বর্তমানে বার্সাকে সুদিনের পথে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ২০১৭ সালের পর থেকে ২০২ ম্যাচে মাঠে নেমে তার গোল সংখ্যা ২০৭টি। এছাড়াও ৩৩টি অ্যাসিস্ট আছে তার নামের পাশে।
১. লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা, পিএসজি)
বর্তমান সময়ের সেরা তারকা আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি। পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছেন। তাকে ঘিরেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্জেন্টিনা। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় নিজেও চান একবার বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে। সবশেষ ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে ধুকতে থাকা দলকে টেনে তুলেছেন মেসি।
২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০৫ ম্যাচে মাঠে নেমে মেসির গোল সংখ্যা ১৬২। সেই সাথে ৭৯টি গোলে সহায়তা করেছেন মেসি। এক জীবনে সবকিছু পেয়েছেন মেসি। সাফল্যের চূড়ায় উঠেছেন বহুবার। রেকর্ড ৭বার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ৩৫ বছর বয়সী এই মহাতারকা। তবে এসবে মন ভরেনি মেসির। স্বাদ পেতে চান বিশ্বকাপ জয়ের। মেসির শেষ বিশ্বকাপ বলেই ভক্তদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখার আশায় বিশ্বের কোটি মেসি ভক্ত। এখন অপেক্ষা মেসি ম্যাজিক দেখার। সূত্র: প্ল্যানেট ফুটবল