ঘনিয়ে এসেছে ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’র ফাইনাল ম্যাচ। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মেসি-এমবাপেরা। তবে আজ রাত ৯টায় কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে হবে উগো লরিস আর এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে। নিজেদের সবটা দিয়ে গোল পোস্টেকে আগলে রাখতে হবে তাদের।
লরিস-মার্তিনেজের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মেসি ও এমবাপেকে আটকানো।
আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স দুই দলেরই রয়েছে ভয়ঙ্কর আক্রমণভাগ। যে কোনো রক্ষণকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাদের। যে কোনো গোলরক্ষকের প্রতিরোধ ভেঙে আদায় করে নিতে পারে গোল। সেদিক থেকে শেষ চ্যালেঞ্জটাই লরিস ও মার্তিনেজের জন্য হতে যাচ্ছে সবচেয়ে কঠিন। বিশ্বকাপের শেষ মহারণে মুখোমুখি হবে ফুটবলের দুই পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। এই ম্যাচে ভুল করার কোনো সুযোগ নেই।
দীর্ঘ দিন ধরে ফ্রান্সের গোল পোস্ট সামলাচ্ছেন লরিস। অনেক দিন ধরেই দলের অধিনায়কও তিনি। তবে অনেকটা হুট করেই দলে জায়গা পেয়ে যান মার্তিনেজ। প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক সের্হিও রোমেরোর চোটের জন্য গত বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগ পান উইলি কাবাইয়েরো। গত বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার সাথে একের পর এক ভুলে তিন গোল হজম করেন তিনি। পরে তার যায়গায় সুযোগ পেয়ে থিতু হতে পারেননি ফ্রাঙ্কো আরমানি। এরপর দলে যায়গা পান মার্তিনেজ।
তবে জাতীয় দলে আসার রাস্তাটা মোটেই সুখকর ছিল না মার্টিনেজের। আর্সেনালের যুব দলে দুই মৌসুম খেলার পর ইংল্যান্ডের ছোট লিগগুলেতে খেলতে হয়েছে তাকে। পরে অ্যাস্টন ভিলায় সুযোগ পেয়েই নিজের প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। ২০২০ সালে অ্যাস্টন ভিলার সেরা গোলকিপার হয়েছেন তিনি। এর পরই ডাক আসে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে। এ সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন তিনি।
নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন কোপা আমেরিকায়। কোপার শিরোপা জেতায় তার অবদান ছিল অনেক। এবার আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নেয়ার পেছনেও অনেক বড় ভূমিকা রেখেছেন মার্তিনেজ। টাইব্রেকারে ভার্জিল ফন ডাইকের প্রথম শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আটকান মার্তিনেজ। স্টিভেন বেরহাসের পেনাল্টি রুখে দেন বাঁ দিকে নিখুঁত টাইমিংয়ের ডাইভ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠে যায় আর্জেন্টিনা।
আক্ষেপের কথা শোনা যায় মার্তিনেজের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, ‘আমার রাস্তাটা সহজ ছিল না। তবে আমি সবসময়ই একজন যোদ্ধা। আমি যখন ঘর ছাড়ি তখন আর্জেন্টিনার কেউ চিনত না আমাকে। এসব ভুলে যাওয়া আমার জন্য সহজ না। ‘
২০১৪ সালের ফাইনালে আর্জেন্টিনা যখন জার্মানির সাথে হেরে যায়, সেদিন কেঁদেছিলেন মার্তিনেজ। ২০১৮ বিশ্বকাপেও গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছেন মার্তিনেজ। সেদিনের আর্জেন্টিনার ফ্যানবয় আজ দাঁড়িয়ে ইতিহাসে সন্ধিক্ষণে।
অন্যদিকে ফ্রান্সের অভিজ্ঞ গোলকিপার লরিসের ঝুলিতে রয়েছে একটি বিশ্বকাপ, উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপা। ফ্রান্স ও টটেনহামের নিয়মিত এই গোলকিপার নীল জার্সিতে খেলেছে ১৪৪ ম্যাচ। যদিও সেরা গোলকিপারদের তালিকায় রাখা হয় না তাকে।
মরুভূমির বিশ্বকাপে দুইজনই কুড়িয়েছে প্রশংসায়। ভূমিকা রেখেছেন দলের অগ্র যাত্রায়। লরিসের চেয়ে অবশ্য এখনটায় একটু এগিয়ে মার্তিনেজ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার-ফাইনাল পেরিয়েছে তার বাজ পাখির ডানায় ভর করে।
দুই ভিন্ন অবস্থান থেকে উঠে আসা দুই গোলকিপারের খেলা ও নেতৃত্বে রয়েছে ভিন্নতা। তবে আবেগ রয়েছে সমান। দেশের জন্য জিততে চান বিশ্বসেরার খেতাব। মেসি-এমবাপেদের লড়াইয়ে জয়ের নায়ক হয়ে যেতে পারেন তারা। গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের পার্থক্য।