নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। স্বপ্নের ফাইনালে এসে হ্যাটট্রিক আদায় করে বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের বদলে জিতেছেন কি না গোল্ডেন বুট। একারণেই কি না বহুল আরাধ্যের গোল্ডেন বুট জিতেও হাসি নেই তার মুখে। রোমাঞ্চ জাগানিয়া ম্যাচে তার দল ফ্রান্স টাইব্রেকে হেরেছে ৪-২ গোলে।
আর এতেই টানা দ্বিতীয় শিরোপার খুব কাছে গিয়েও ইতিহাসের নায়ক হতে পারেননি তিনি।
টুর্নামেন্টে ৮ গোল দিয়ে গোল্ডেন বুট জিতেছেন ২৩ বছর বয়সী এই ফরাসি তারকা। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ছুঁতে না পারায় গোল্ডেন বুটটি হয়েছে মূল্যহীন। অথচ রূপকথার গল্প লিখতে ফ্রান্সের হয়ে মাঠে একাই লড়ছিলেন এমবাপ্পে। কিন্তু টেনে তুলতে পারেননি দলকে। তীরে এসে তরী ডুবিয়েছে তার দল। টাইব্রেকে তার দল হেরেছে শিরোপার খুব কাছে গিয়ে।
এদিন এমবাপ্পের সাথে সমান তালে লড়ে গেছেন মেসি। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে তরুণের সাথে টক্কর দিয়েছেন মেসি। দিনের শুরুতেই এদিন এমবাপ্পেকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন মেসি। তবে শেষ পর্যন্ত এমবাপ্পের হ্যাটট্রিকের বিপরীতে মেসির জোড়া গোলই গড়ে দিয়েছে পার্থক্য। ম্যাচ গড়িয়েছিল টাইব্রেকে। অবশ্য তার আগেই মেসিকে ছাড়িয়ে টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৮ গোল দিয়ে গোল্ডেন বুট জিতে নেন এমবাপ্পে।
কাতার বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জেতার দৌড়ে সমান্তরালে ছিলেন দুই মহাতারকা, আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ও ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে। ফাইনালে এই দ্বৈরথটা জমে উঠতে পারে এমন একটা সম্ভাবনার মঞ্চ ছিল তৈরি। জমলও বেশ। এমবাপে মেষ খেলায় বাজিমাত করলেন। মেসিকে পেছনে ফেলে কাতার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ফ্রান্সের এমবাপ্পে।
মেসি-এমবাপে দু’জনেরই ফাইনালের আগে গোলসংখ্যা ৫টি। লুসাইল স্টেডিয়ামে ২২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল পেতেই মেসি উঠে যান চূড়ায়। তিন ম্যাচ পর একাদশে ফেরা আনহেল ডি মারিয়া এদিন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। বাম পাশ দিয়েই মূলত বেশিরভাগ আক্রমণে উঠেছে কোচ লিওনেল স্কালোনির দল। ২২তম মিনিটে আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি এনে দেন সেই ডি মারিয়াই। বক্সের ভেতর তাকে ফাউল করেন ফ্রান্সের উসমান দেম্বেলে। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি শিমন মারচিনিয়াক।
পেনাল্টি নিতে ধীরপায়ে এগিয়ে আসা মেসিকে বুঝতে পারেন নি ফরাসি গোলরক্ষক উগো লরিস। ঝাঁপিয়ে পড়েন নিজের ডান পাশে, একটু থেমে গিয়ে সময় নিয়ে মেসি শট নেন তার বাম পাশ দিয়ে। বলটা গিয়ে আছড়ে পড়ে জালে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেসিও পেয়ে যান তার তার ক্যারিয়ারের আরাধ্য এক গোল। এরপর আরেকটা গোল পেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু এমবাপ্পে মেসির ২ গোলের বিপরীতে করেন তিনটি।
৮ গোল করে গোল্ডেন বুট এমবাপের। ৭ গোল করে তার পেছনেই মেসি। এই বিশ্বকাপে পেনাল্টি থেকেই গোল বেশি তার। মেসি-আর এমবাপ্পে কাতার বিশ্বকাপে ৭টি করে ম্যাচ খেলেছেন। পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়া বাকিগুলোতে গোল পেয়েছেন মেসি। যদিও ৬ গোলের চারটিই স্পটকিক থেকে এসেছে।
২৩ বছর বয়সী এমবাপ্পে ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল। অন্য গোলটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এরপর ফাইনালে হ্যাট্রিক। গতি আর ড্রিবলিংয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন আসছে সময় শুধু তারই।