সূরা আল আরাফ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ৭ নম্বর সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ন তাই এই সূরাকে মক্কি সূরা বলা হয়। সূরা আল আরাফের মোট আয়াত সংখ্যা ২০৬টি। এতে রয়েছে ২৪টি রুকু। আরাফ আরবি শব্দ। এর অর্থ উঁচু স্থান। আরাফ বলা হয়, জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে অবস্থিত একটি বিশেষ স্থানকে।
সূরা আরাফের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ তাআলা এ সূরার চার স্থানে মানবজাতিকে ‘হে আদম সন্তান!’ বলে সম্বোধন করেছেন। এ সূরায় হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের ক্ষমা প্রার্থনার ঐতিহাসিক দোয়া তুলে ধরা হয়েছে। মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে শয়তানের আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমতা চেয়ে নেয়ার বিষয়টি ওঠে এসেছে এ সূরায়। আল্লাহ তাআলা কুরআন সে কথা তুলে ধরেছেন এভাবে-
সে বলল- আমাকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন- নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত। সে বলল- আপনি আমাকে যেমন পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সূরা আরাফ: আয়াত ১৪-১৭)
শয়তান আল্লাহর আল্লাহর হুকুম অমান্য করার পর বেহেশত থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছিল। সেই জেদ থেকেই জান্নাতের নেয়ামতের পরিবর্তে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার ক্ষমতা লাভ করে শয়তান। সব সময় মানুষকে ঈমান-আমল থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে উলঙ্গ করে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত। যেভাবে আদি পিতা ও মাতাকে বেহেশতে থেকে উলঙ্গ করে বের করে দিয়েছিল শয়তান। আল্লাহ তাআলা তা উল্লেখ করেন বলেন-
‘হে বনি আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ২৭)
অতঃপর হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে এভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন-
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ২৩)
এ সূরায় আসমান জমিন সৃষ্টি ও তার অবস্থানের কথাও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন এভাবে-
‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৫৪)
যুগে যুগে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত ও ইবাদতের যে দাবি নিয়ে নবি রাসুলদের আগমন ঘটেছিল তার উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ওঠে এসেছে এ সূরায় আর তাহলো-
হজরত নুহ আলাইহিস সালামের দাওয়াত: ‘নিশ্চয় আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠিয়েছি। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্যে একটি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৫৯)
হজরত হুদ আলাইহিস সালামের দাওয়াত: ‘আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। সে বলল- আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোনো উপাস্য নেই।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৬৫)
এ ছাড়াও হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা বেশি বর্ণিত হয়েছে। মুসা আলাইহিস সালামকে দেয়া মুজিজাগুলো ছিল সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট। বিশেষ করে লাঠি ও শুভ্র হাতের মোজেজা দুটি। এ জাদুকে ফেরাউন ও তার লোকেরা জাদু মনে করত। মুসার মোকাবিলার জন্য জাদুকররা এসেছিল সাপ নিয়ে। মুসা আলাইহিস সালাম-এর হাতের লাঠিটি সাপ হয়ে সেগুলোকে গিলে ফেলে। এতে জাদুকররা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ঈমান আনে। ফেরাউন ঈমানের ‘অপরাধে’ এদের শূলে চড়ায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন – ‘অবশ্যই আমি কেটে দেব তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে। তারপর তোমাদের সবাইকে শূলীতে চড়িয়ে মারব।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ১২৪)
অতঃপর আল্লাহর কাছে মুমিনরা ধৈয্য লাভ ও ঈমানি মৃতু্যর দোয়া করবে এভাবে-
رَبِّنَا لَمَّا جَاءتْنَا رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
‘হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার খুলে দাও এবং আমাদের মুসলমান হিসাবে মৃত্যু দান কর।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ১২৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে সূরা আল আরাফ নিয়মিত পাঠ করা ও বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।