পটুয়াখালীর গলাচিপায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেকি এখল বিলুপ্তের পথে। পল্লী গীতির ও বউ ধান ভানো-রে ঢেঁকিতে পার দিয়া’ একসময়ের খুব জনপ্রিয় গানের সুরও যেন বদলে যেতে বসেছে। আবার প্রবাদ বাক্যে প্রচলিত ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।’ ঢেঁকিকে নিয়ে অনেক গান ও প্রবাদ প্রচলিত থাকলেও কালের বিবর্তনে ও যান্ত্রিক আবির্ভাবের ফলে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে একসময় ঢেঁকিতে ধান ভাঙার দৃশ্য চোখে পড়তো।
এখন আর গ্রাম বাংলায় ঢেঁকিতে ধান ভাঙার দৃশ্য চোখে পড়ে না, শোনা যায় না ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ। শহরে তো বটেই আজকাল অনেক গ্রামের ছেলে মেয়েরাও ঢেঁকি শব্দটির কথা জানলেও বাস্তবে দেখেনি। অনেকের কৌতুহল কেমন করে মেশিন ছাড়া ধান থেকে চাল বের করা হতো ? আসলে ধানের খোসা ছাড়িয়ে চাল বানানোই ছিল ঢেঁকির কাজ। ঢেঁকি হচ্ছে কাঠের তৈরি কল বিশেষ। প্রায় ৬ ফুট লম্বা ও ২০ ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট একটি ধড় থাকে ঢেঁকিতে। মেঝে থেকে ১৮ ইঞ্চি উচ্চতায় ধড়ের সামনে এক ফুট বাকি রেখে দুই ফুট লম্বা একটি গোল কাঠের মাথায় লোহার রিং পড়ানো থাকে। এটাকে মোনাই বলা হয়।
পেছনে দুটি বড় কাঠের দন্ডের ভিতর দিয়ে একটি হুড়কা হিসেবে কাঠের গোলাকার খিল থাকে। এভাবেই তৈরি ঢেঁকি দিয়ে একসময় ধান ভাঙার কাজ হতো। ঢেঁকি দিয়ে শুধু ধান থেকে চালই নয়, পিঠা তৈরির জন্য চালের গুড়াও তৈরি করা হতো। একসময় নতুন ফসল তোলার পর ও পৌষ সংক্রান্তিতে ঢেঁকির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি। গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাড়িগুলোতে ঢেঁকিঘর হিসেবে আলাদা ঘর থাকতো। গৃহস্থবাড়ির নারীরা ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। গরিব নারীরা ঢেঁকিতে শ্রম দিয়ে আয় রোজগারের পথ বেছে নিতেন। ঢেঁকিতে কাজ করাই ছিল দরিদ্র নারীদের আয়ের প্রধান উৎস।
আধুনিক যুগে সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়েছে বিদ্যুৎ চালিত মেশিন। চালকলের মাধ্যমে মানুষ এখন অতি সহজেই অল্প সময়ে ধান থেকে চাল পাচ্ছে। যেখানে ঢেঁকি দিয়ে আগে মানুষ ধান ভাঙতো দিনে সাত থেকে আট মন, এখন গ্রামে-গঞ্জে হাসকিং মিল ও অটোরাইস মিলের মাধ্যমে দিয়ে কয়েক হাজার টন ধান ভাঙিয়ে ঝকঝকে চাল তৈরি করছে। হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মতো ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো প্রাচীন এই যন্ত্রগুলোর দেখা মিলবে কেবল যাদুঘরে।