ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগ থেকে অবসর নিলেন সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার। সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি। তার কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীল সাংবাদিকতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি সরূপ পেয়েছেন নানা পুরস্কার। সর্বশেষ আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ভূষিত হন অলষ্টার এওয়ার্ড খেতাবে।
ভয়েস অব আমেরিকার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় দুই যুগ ধরে। বাংলা বিভাগের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ভাষার অনুষ্ঠানও চালু করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার ২৮ মে এই প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
রোকেয়া হায়দারের জন্ম যশোরের মেয়ে হলেও বাবার কর্মসূত্রে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায়। বাবা আবু বকর ফারাজী ও মা মেহেরুন্নেসা বাকারের ছয় সন্তানের ভেতর তিনি তৃতীয়। বড় বোন সুফিয়া আমিন এক সময় প্রখ্যাত নজরুল সংগীত শিল্পী ছিলেন।
কলকাতার সেন্ট জন্স বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু। পরে ইডেন কলেজে পড়েন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন। তারপর ষাটের দশকে স্বামী হায়াদার তাকির কর্মসূত্রে চলে যেতে হয় চট্টগ্রাম। রোকেয়া হায়দারের বেতার জীবনের শুরু কোলকাতায় নানার হাত ধরে শিশুমহলে মাইক্রোফোনের সাথে মিতালী, স্কুল কলেজে পড়াশুনোর ফাঁকে ফাঁকে বেতারে নাটক ও অনুষ্ঠান উপস্থাপনা দিয়ে। ১৯৬০ এর দশকেই চট্রগ্রাম বেতারে নিয়মিত অনুষ্ঠান ঘোষিকা হিসেবে কাজ করেন।
১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বেতারে আঞ্চলিক সংবাদ পাঠ দিয়ে শুরু হয় তাঁর সংবাদ উপস্থাপনার জীবন। তবে পেশাদার সাংবাদিকতার শুরু ৭৪ সালে ঢাকা বেতার ও টিভির নিয়মিত খবর পড়া দিয়ে। স্পষ্ট উচ্চারণ, বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ও আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাবের কারণে স্বল্পকালের মধ্যেই রোকেয়া হায়দার খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান। বাংলাদেশে যখন টিভি আসেনি তখন সবার কাছে ভয়েস অব আমেরিকা বেতারের অনুষ্ঠান ছিলো দারুন জনপ্রিয়।
১৯৮১ সালে বিশ্বখ্যাত ভয়েস অব আমেরিকার আমন্ত্রণে চলে যান ওয়াশিংটন ডিসিতে। পুরো খবর পড়াই নয় পুরোদস্তর সাংবাদিকতার দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে। রোকেয়া হায়দার ভিওএ বাংলা বিভাগের ম্যানেজিং এডিটরের দায়িত্ব লাভ করেন। ২০১১ সালের জুন মাস থেকে রোকেয়া হায়দার বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগে তিনিই প্রথম নারী প্রধান। রোকেয়া হায়দারের ভয়েস অব বাংলা বিভাগ তাঁর নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনুষ্ঠানের প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে বিরাট ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।