প্রথমবারের মতো ফুটবল বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ বসছে মরুভূমির দেশ কাতারে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের মাটিতে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’র মহারণ শুরু হতে বাকি আর মাত্র ৬ দিন। ব্রাজিলের হেক্সা (ষষ্ঠ শিরোপা), নাকি লিওনেল মেসির প্রথম অথবা শিরোপা ধরে রাখতে পারবে ফ্রান্স, নাকি শিরোপা পুনরুদ্ধার করবে জার্মানি-ফুটবল বিশ্বে এখন উড়ে বেড়াচ্ছে এমন সব প্রশ্ন। কোন দল এগিয়ে আর কোন দলই’বা শক্তির বিচারে পিছিয়ে-এসব নিয়ে আলোচনা চলছে ধুমছে।
চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এসবের ভিড়ে আজ আপনাদের জানাবো মরুভূমির বুকের প্রথম বিশ্বকাপে এমন অনেক কিছু আছে যা আগে কখন দেখেনি ফুটবল বিশ্ব।
আগামী ২০ নভেম্বর কাতারে মাঠে গড়াচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। প্রায় ১২ বছর আগে বিশ্বকাপের মত বৃহৎ আসর আয়োজনের স্বত্ব লাভ করেছিল মধ্য প্রাচ্যের দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম ও ২০০২ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের যৌথ আয়োজনের পর পুরো এশিয়ায় দ্বিতীয় দেশ হিসেবে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে। এবারই শেষবারের মত ৫টি কনফেডারেশনের ৩২টি দল বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে। ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার বর্ধিত কলেবরের যৌথ আয়োজনে ৪৮টি দল অংশ নিবে।
২০২২ বিশ্বকাপে যা কিছু প্রথম
অফসাইড টেকনোলজি
বিশ্বকাপ হবে কিন্তু অফসাইড নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হবে না তা কি হয়। প্রতি বিশ্বকাপে অফসাইড নিয়ে বিতর্ক হয়। এবার সেই বিতর্ক কমাতে ব্যবস্থা নিয়েছে ফিফা। সাইডলাইন রেফারির অফসাইড সিদ্ধান্তকে আরো বেশি দ্রুত ও যথার্থ করা লক্ষ্যে এবারই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে সেমি-অটোমেটেড অফসাইড পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। জুলাইয়ে এ সংক্রান্ত ঘোষনা দেয়া বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
ফিফার আইনানুযায়ী একজন খেলোয়াড় তখনই অফসাইড পজিশনে থাকবেন যখন তার মাথা, শরীর কিংবা পায়ের যেকোন অংশ প্রতিপক্ষের হাফওয়ে লাইনে থাকবে এবং একইসাথে মাথা, শরীর ও পায়ের যেকোন অংশ বল কিংবা দ্বিতীয় কোন প্রতিপক্ষের তুলনায় গোল লাইনের কাছাকাছি থাকবে।
আরও পড়ুন : ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা জিতবে আর্জেন্টিনা, গোল্ডেন বুট মেসির
নতুন টেকনোলজিতে বলের মধ্যে সেন্সর ব্যবহৃত হবে এবং খেলোয়াড়দের মুভমেন্ট অনুসরণ করার জন্য লিম্ব-ট্র্যাকিং ক্যামেরা পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে। ঘরে থাকা দর্শকদের জন্য রেফারির সিদ্ধান্ত ভালভাবে বোঝার জন্য স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে থ্রিডি ইমেজের মাধ্যমে ডাটা ব্যবহার করা হবে।
খেলোয়াড় বদলি
চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে তিনজন খেলোয়াড় বদলির নিয়ম থাকলেও তা বেড়ে এবার পাঁচজন করা হয়েছে। ফুটবলের আইন-প্রনয়ন সংস্থা আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড ২০২০ সালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সব কিছু বিবেচনা করে পাঁচজন খেলোয়াড় বদলির নিয়ম চালু করে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন লিগে করোনার কারনে খেলোয়াড় সঙ্কট দেখা দেওয়ায় নতুন ক্লাবগুলোর অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড।
বিশ্বকাপের কোন ম্যাচ যদি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় তবে একজন বাড়তি খেলোয়াড় বদলের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে কাতার বিশ্বকাপে।
দলের খেলোয়াড় সংখ্যা বৃদ্ধি
রাশিয়া বিশ্বকাপের চেয়ে প্রতিটি দলে এবার তিনজন করে খেলোয়াড় বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ ২৬ জনকে নিয়ে চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হয়েছে। টুর্নামেন্টের স্বাভাবিক সময় পরিবর্তন করে নভেম্বরে বিশ্বকাপ আয়োজন ও করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখেই প্রতিটি দলকে আরো তিনজন খেলোয়াড় অন্তর্ভূক্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফিফা।
নভেম্বরে বিশ্বকাপ শুরু হওয়া
জুন-জুলাইয়ের পরিবর্তে এই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। জুন-জুলাইয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রচন্ড গরমের কথা বিবেচনা করে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। জুনে কখনো কখনো মধ্যপ্রাচ্যের কোন অঞ্চলের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে কাতারের তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়ার থেকে ৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : বিশ্বকাপের জন্য ‘সাজগোজ’ শুরু নেইমারের
নারী রেফারি
এই প্রথমবারের মত পুরুষ বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনজন নারী রেফারি। কাতারের জন্য ফিফার নির্বাচিত ৩৬ জন রেফারি প্যানেলে তারা সুযোগ পেয়েছেন।
ফ্রান্সের স্টিফেনে ফ্র্যাপার্ট, জাপানের ইওশিমি ইয়ামাশিতা ও রুয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা এর আগেও পুরুষদের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো উয়েফা সুপার কাপ ও আফ্রিকান ন্যাশনস কাপ। এই তিনজন রেফারির সঙ্গে ৬৯জন সহকারী রেফারির মধ্যেও রয়েছেন তিনজন নারী।