মিডাস টাচের মতো যখন যেখানে যা-ই স্পর্শ করছেন লিওনেল মেসি, সেখানেই সোনা ফলেছে। ক্যারিয়ারজুড়ে অগণিত শিরোপা জমে আছে তার শোকেসে। তবে দীর্ঘদিন জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা ছিল না এই আর্জেন্টাইন মহাতারকার। যা ক্যারিয়ারজুড়ে আক্ষেপ হয়ে ছিল মেসির জন্য।

অবশেষে ২৮ বছর পর কোপা আমেরিকা জয়ে সেই আক্ষেপ ঘুচে মেসির। এখন অপেক্ষা বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরে শেষটা রাঙিয়ে রাখা। মেসিও যে সেটি পূরণে সম্ভাব্য সবকিছুই করবেন তা ভালোই জানা আছে তার এক সময়ের জাতীয় দলের সর্তীথ সার্জিও আগুয়েরোর।

সব ঠিক থাকলে হয়তো মেসির সঙ্গে আক্রমণভাগে নেতৃত্ব দিতেন আগুয়েরোও। তাতে শক্ত হতো আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ। তবে হৃদরোগ জনিত কারণে হঠাৎ থামতে হয়েছে তাকে। বিদায় বলতে হয়েছে প্রিয় ফুটবলকে। নিজে না পারলেও বন্ধু মেসিকে নিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখেন তিনি। বিশ্বাস করেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী হতাশ করবেন না তাকে।

চলতি বিশ্বকাপে মেসি ম্যাজিক চলছেই। আর তাতে বিশ্বকাপ জয়ের পথে একটু একটু করে এগিয়ে চলছে আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ের পর মেসিকে ঘিরে প্রত্যাশা আরও বেড়েছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। ম্যাচে দুর্দান্ত এক গোলে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন মেসি। সমর্থনও পাচ্ছেন সতীর্থদের কাছ থেকে; যা সাহসী করছে আর্জেন্টিনাকে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের প্রথম গোলটি করেন মেসি, যা চলতি আসরে তার তৃতীয় গোল এবং পাঁচ আসর মিলিয়ে নকআউট পর্বে প্রথম। একই সঙ্গে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্ব মঞ্চে সবচেয়ে বেশি গোলের তালিকায় কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে এককভাবে দুই নম্বরে জায়গা করে নেন তিনি, তার গোল সংখ্যা ৯। মেসির এমন পারফরম্যান্সের দিনে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আর্জেন্টিনা। চারদিকে চলছে মেসি বন্ধনা। যা ছুয়ে গেছে আগুয়েরোকেও।

ইএসপিএন এর সঙ্গে আলাপচারিতায় আর্জেন্টিনার সাবেক এই ফরোয়ার্ড বলেন,  ‘কোপা আমেরিকা শিরোপা অনেকটাই ভারমুক্ত করে দিয়েছে মেসিকে, জাতীয় দলে খেলাটাও অনেক বেশি উপভোগ করছেন তিনি। লক্ষ্য অর্জনের (বিশ্বকাপ জয়) জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করবে লিও, যা আমরা সবাই চাই। লিও খুশি। কোপা আমেরিকা জয় তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে। কোপা আমেরিকার পর সে আবার জাতীয় দলে খেলা উপভোগ করছে, যেমনটা আমরা অনূর্ধ্ব-২০ দলে করেছিলাম। ’

সবশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলে আর্জেন্টিনা। তবে শিরোপা জেতা হয়নি। জার্মানির বিপক্ষে হেরে বিষাদ সঙ্গী হয় মেসির। এরপর ২০১৫ ও ১৬ পরপর দুই আসরে কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারতে হয় মেসিকে। সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয়েছে তাকে। ঘোষণা দিয়েছিলেন অবসরেরও। পরে অবশ্য ফিরে আসেন তিনি। স্কালোনির অধীনে দলকে জেতান কোপা আমেরিকা শিরোপা। এরপর থেকেই বদলে যায় আর্জেন্টিনা। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপে পা রাখে আর্জেন্টিনা। এখন অপেক্ষা বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরা। আর সেটি বাস্তবায়নে যে সম্ভব্য সব কিছুই করবেন মেসি, জানা আছে আগুয়েরোর।

তিনি বলেন, ‘লিও সমালোচনাকে সঙ্গী করে এগিয়ে গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে ফাইনালগুলোতে হেরেছে। কোপা আমেরিকা জয় ছিল তার জন্য মুক্তির আনন্দ। বিশ্বকাপ জিততে চায় সে। বিশ্বকাপ জয়ের জন্য সবকিছুই করবে লিও।